দ্বিজেন শর্মা স্মরণে


একটা সময়কালে আমার নেশা ছিল ওষধি গাছপালা খুঁজে বেড়ানো। সেগুলো জড়ো করে ওষধি বাগান করা। বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় এই কাজটি করেছিলাম।

বরিশাল শহরের বিখ্যাত রাস্তাটির নাম বগুড়া রোড। সদর গার্লস স্কুল থেকে মুন্সীর গ্যারাজের আগ পর্যন্ত বেশ চওড়া ছিল এই রাস্তাটি। ডগলাস বোর্ডিংএর পাশ থেকে বোতল পামের সারি। খুব শান্ত এই পাড়াটি। হক মঞ্জিলে আমার বাসা। আর সমবায় ব্যাঙ্কের পাশে ভুতের বাড়ি। এটাই আমার অফিস। দোতলার শেষ রুমটিতে আমি বসতাম।

ভুতের বাড়িটি অনেক বড়। আঙিনা জুড়ে তিনটি বাগান করেছিলাম। ফুল, সবজি আর ওষধি গাছের বাগান। প্রতিটি গাছে পরিচিতি ও গুণাগুণ লেখা হয়েছিল। অনেক মানুষ দেখতে আসতেন।

প্রাতঃভ্রমণে এসে দ্বিজেন শর্মা বাগানটি দেখেছিলেন। সস্ত্রীক পুষ্পদির বাড়িতে উঠেছিলেন। সেটা তাঁর শ্বশুরবাড়ি। বুড়োকালে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসতে দেখে বেশ মজাই লেগেছিল। কবি অভিজিৎ দাস আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মার কাছে।

সেবারে দিনসাতেক ছিলেন বরিশালে। প্রতিদিনই দ্বিজেন শর্মা আমাকে ডেকে নিতেন। বরিশাল শহরের গাছপালা ঘুরে ঘুরে দেখাতেন। বিএম কলেজে এক সময় তিনি শিক্ষকতা করতেন। কলেজ ক্যাম্পাসে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন করেছিলেন। গাছগুলো বেশ বড় হয়ে গিয়েছিলেন। এগুলো ছিল তাঁর সন্তানতুল্য। গাছগুলোকে মানুষের মতো জিজ্ঞেস করে কুশল জানতে চেয়েছিলেন আমার সামনে।

কাল সুইট বীন নামে একটি জাপানি মুভি দেখেছি। সেখানে এক বুড়ি অবাক হয়ে চেরি গাছের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ফুল ফোঁটা দেখেন। পাখির ডাক শোনেন। আর সুইট বীনের ডয়ার্কি বানান। তার স্বাদ অপূর্ব। এই সুস্বাদু রান্নাটির গোপন রহস্য কী?

বুড়ি বলে, রান্না করতে করতে এই বীনগুলোর সঙ্গে গল্প করেন। তাদের বেড়ে ওঠার কাহিনী শোনেন। এভাবেই তার রান্না অপূর্ব হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, এই প্রকৃতিকে চোখ মেলে দেখতে হবে। এই আলো হাওয়া জল মাটি গাছপালার গল্প শুনতে হবে। তাহলে মানুষও প্রকৃতির অংশ হয়ে উঠবে। তার কোনো দু:খ কষ্ট বেদনা বিষাদ থাকবে না। হয়ে উঠবে সুখী মানুষ।

বুড়ি নিউমেনিয়ায় মারা গিয়েছিলেন। তার জন্য কোনো কবরস্থান ছিল না। একটি চেরি গাছ লাগানো হয়েছিল।

দ্বিজেন শর্মা এরকমই একজন সুখী মানুষ ছিলেন। এরকম সুখী মানুষ খুব বেশি নেই। আজ তিনি চলে গেলেন। তাঁকে সেল্যুট।

তাঁকে মনে রেখে নিউ ইয়র্কে একটি ডুমুর গাছ লাগাব।
-------------------------------------
নিউ ইয়র্ক, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

Post a Comment

2 Comments

  1. Mohammed Ataur Rahman
    প্রকৃতি থেকে যে জ্ঞান নিতে না পারেন, সে কখনো জ্ঞানী হতে পারেন না

    Rukhsana Kajol
    কি ?

    Palash Basak
    ধুলার মানুষ, ধুলায় মিশে যায়।
    হায়,
    যেতে নাহি দেবো, তবু চলে যায়!
    ... নিসর্গপ্রেমের ক্ষত্রে বিভূতিভূষণের পরেই গুরু হিসেবে আমি মানতাম দ্বিজেন শর্মাকে... কখনো তার সাথে দেখা হয়নি আমার, কিন্তু মনে হয় অনেক দিনের চেনা... চেনা মানুষ একেবারে চলে গেলে হারনোর ব্যথা বাজে, বুকের গভীরে... তবে কিনা প্রকৃতির সন্তানদের মৃত্যু নেই, কেননা অনন্ত প্রকৃতিতেই তারা মিলিয়ে যায়...

    Iqbal Hossain
    ভাল মানুষগুলো একে একে বিদায় নিচ্ছে। আমরাও একদিন থাকবোনা। প্রকৃতি থাকবে। আপনার ডুমুর গাছটি প্রকৃতির হয়ে বেঁচে থাকবে। আপনি দীর্ঘজীবি হোন, দাদা।

    Kuloda Roy
    ডুমুর গাছ বেহেস্তে আছে। এর আরবি নাম তুন।

    Amar Mitra
    দ্বিজেন শর্মা কোথায় থাকতেন শেষের কটি বছর ?

    Supriti Dhar
    Dhaka te

    Shumi Sikander
    মনে রাখবো লেখাটা দাদা।

    Shyamali Acharjya
    সদর গার্লসে পড়তেন দিদা, মাসী অনেকেই।
    মায়ের দাদু বনমালী গাংগুলীর বাড়ি নাকি এখন সদর গার্লসের হোস্টেল।
    বাবার কাছেও শুনেছি প্রচুর গল্প। বি এম স্কুলে কলেজে পড়ে পড়াতেও শুরু করেন।
    দুর্ভাগ্য, চলে আসতে হয় ৬৮ সালে। আর ফিরতে পারেননি।
    মায়ের মামাবাড়ি, আমার মামাবাড়ি বাবার বাড়ি দেখার আশায় বসে আছি।
    আপনার লেখা পড়ে মনে পড়ল হঠাত....

    Kuloda Roy
    বনমালী গাঙ্গুলীর বাড়িতে বিএম কলেজের মহিলা হোস্টেল। বগুড়া রোড ধরে নতুন বাজারের দিকে গেলে হোস্টেলটি পড়ে।
    মুন্সীর গেরেজের পাশে কবি জীবনানন্দের বাড়ি। তারপর শীতলা খোলা। বরিশাল শহর জুড়ে অসংখ্য মন্দির। সূর্য ডুবে গেলে জেগে ওঠে।

    Shyamali Acharjya
    ডিসেম্বরে আসার কথা, দেখি ভাগ্য যদি সাথ দেয়...

    ReplyDelete
  2. Shilpi Dey
    লেখাটা পড়ে ভাল লাগল...


    Kuloda Roy
    কখনো মন্দ করে লেখার চেষ্টা করিনি। তুমি জানো শিল্পী।
    LikeShow more reactions · Reply · 1 · September 14 at 11:37pm

    Shilpi Dey
    ঠিক

    Shilpi Dey
    BAU'87 এর ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখ বিকেল ৩.৩০ এ খামারবাড়িস্থ গিয়াস উদ্দীন মিল্কী অডিটরিয়াম সংলগ্ন কনফারেন্স রুমে। চলে এসো .........

    Kuloda Roy
    আসব। তোমার কি মনে আছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সব গাছের নাম জানতেন অনিলদা।

    Shilpi Dey
    সব গাছের নাম ! ....

    Kuloda Roy
    ইয়েস। জিজ্ঞেস করে নিও। কুর্চি গাছটিকে মনে আছে তোমার?

    Shilpi Dey
    না রে।এবার নভেম্বরে ফিশারীজ ফ্যাকাল্টির সূবর্ন জয়ন্তিতে গিয়ে গাছটাকে খুজে বের করব

    Kuloda Roy
    চন্দন গাছের একটু সামনে ছিল।
    LikeShow more reactions · Reply · September 14 at 11:51pm

    Sraboni Endow Chowdhury
    যথারীতি অনবদ্য লেখা। শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মা অনন্তলোকে চলে গেলেন জেনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

    Sk Kamrul Hashan
    আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে সত্য সুন্দরো......

    Dawood Al-Hafiz
    ডুমুরগাছই হোক!

    Ahmed Munir
    অনেক সুন্দর লিখেছেন, ১৯৮৩ সালে চাকুরীসূত্রে ওই মুন্সীর গ্যারেজের পাশে তখনকার এনএসআই অফিসের পিছনে একবছর কাটিয়েছি। কাউনিয়ায় ছিলো অফিস, সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। আজ আর মুন্সীর গ্যারেজের অবস্থা সেরকম নেই, ইট পাথরের চাকচিক্য এখন অন্য রকম। মুন্সীর গ্যারেজ এলাকা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। জানিনা আপনার সেই ভুতের বাড়ী এখনও আছে কি না। প্রকৃতি প্রেমী দ্বিজেন শর্মার প্রতি শ্রদ্ধা।

    Apu Dam
    সংবাদে তাঁর লেখা পড়ে মুগ্ধ হতাম। সিদ্ধেশ্বরীতে তাঁর বাসার সামনে সাইনবোর্ড দেখে কতবার চিন্তা করেছি দেখা করতে যাব কিন্তু সাহসে কুলায় নি! আমার তো কোনও গুণ বা যোগ্যতা ছিল না শুধুমাত্র তারঁ লেখার পাঠক ছাড়া! যদি পাত্তা না দেয় কিংবা দাড়োয়ান যদি ঢুকতে না দেয়!
    প্রিয় মানুষটির প্রয়ানে তাঁর লেখাগুলো ভেসে উঠছে! সংবাদের সাহিত্য-সাময়িকীর পাতাটাই যেন ছিল এক মহীরুহু। তার মাঝে দ্বিজেন শর্মার লেখা ছিল নির্মল আনন্দের খোড়াক- মুগ্ধতার সীমাহীন বাগান।
    প্রয়াত দ্বিজেন শর্মার বিদেহী আত্মার প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ রইল।

    Jannatul Ferdous Nouzula
    এত ভালো লাগলো ... একবার শেষ করে, মুহূর্তেই দ্বিতীয়বার আবার পড়ে ফেললাম!

    Mohammad Bari
    গভীর শ্রদ্ধা এই মহানের প্রতি...

    Chanchal Bhattacharya
    দ্বীজেন কাকুর প্রয়ানে খুব খারাপ লাগছে। মস্কোর কথা মনে পড়ে যায়।

    Manabendra Kishore Debroy
    শেষ পর্যন্ত ঋষিতুল্য প্রকৃতি ও বৃক্ষপ্রেমিক অসাধারণ এই মানুষটিও চলে গেলেন ! সদ্যপ্রয়াত দ্বিজেন শর্মার প্রতি আমার সশ্রদ্ধ ভালবাসা ও প্রণাম।

    Shyamal Bala
    গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এই মহানের প্রতি ; আপনাকেও প্রণাম দাদা !

    Sadhan Das
    প্রকৃতিকে গভীর অনুভব করলাম।

    Habibullah Sirajee
    সশ্রদ্ধ অভিবাদন।

    Brata Roy
    সব ছবির মত দেখতে পাচ্ছি।

    আলতাফ হোসেন দ্বিজেনদা নেই আর ভাবতে পারছি না। বেইলি রোডে যখন থাকতাম, রমনা পার্কে যেতাম হাঁটতে রাকা আর আমি, দ্বিজেনদা-র সঙ্গে প্রায়ই দেখা হত। কত গাছ চিনিয়ে দিয়েছেন, কত ফুল। রাকা-র হাতে একদিন ফুল-পাতা দেখে বললেন, তোমার হাতে ওটা কী? পারুল? গাছ, ফুল নিয়ে কে লিখবেন তাঁর মতো করে আর? কে চেনাবেন নতুন গাছেদের? কষ্ট হচ্ছে খুব।

    Abu M. Yousuf
    এই প্রকৃতিকে চোখ মেলে দেখতে হবে। এই আলো হাওয়া জল মাটি গাছপালার গল্প শুনতে হবে। তাহলে মানুষও প্রকৃতির অংশ হয়ে উঠবে। তার কোনো দু:খ কষ্ট বেদনা বিষাদ থাকবে না। হয়ে উঠবে সুখী মানুষ।

    Mahbub Kabir
    দ্বিজেন শর্মা কখনওই চলে যাবেন না। এত সবুজ ভালবাসা ছড়িয়েছেন তিনি, বৃক্ষগণ ধরে রাখবেন তাঁকে। মানুষ হয়তো ভুলে যাবে।

    LuTfun Nahar Lata
    কত যে ভাল লাগল দাদা! জগতের একজন সুখী মানুষ দ্বিজেন শর্মার আত্মার শান্তি হোক। শ্রদ্ধা তাঁর পায়ে।

    Papia Bhattacharya
    লেখাটি বড় মনের মত আমার...

    ReplyDelete