ময়মনসিংহ থাকিবার কালে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ হইতে হাতে টান পড়িয়া যাইত। বাকী দুই সপ্তাহ কী করিয়া চলিবে তাহার চিন্তায় কিঞ্চিৎ গাত্রকম্পন হইত। তাহা দেখিয়া স্বর্গীয় শিবকালী ভট্টাচার্য মহাশয় চরক ও শুশ্রূত ঘাটিয়া কহিয়াছিলেন, তুমি বৃশ্চিক রাশির জাতক। তাহাতে তোমার রাহু কেতুতে অবস্থান করিয়া ঘুমায়। ফলত তোমার প্রাত্যহিক আমিষাদি আহার করিবার আবশ্যক রহিয়াছে।
'কী প্রকারের আমিষাদি প্রভু' এই বাক্য জিজ্ঞাসা করিলে তিনি কহিলেন, ওহে বাপু, লেখাপড়া করিলে জানিতে পারিতে উদ্ভিজ্জাত আমিষাদি উইক বলিয়া কথিত হয়। আর প্রাণীজাত আমিষাদি স্ট্রং বলিয়া গণিত হয়। আক্কেল মন্দ কে লিয়ে ইশারায় কাফি বলিয়া শিবকালী মহাশয় ত্বরা ত্বরা স্বর্গগত হইলেন।
তাহাকে ডাকিয়া শুধাইলাম, আচার্য মহাশয়, আমি মাঝে মাঝে ঘাস কাটি। মাঝে মাঝে গোপনে নদ্যাদি হইতে বালি টানি। তাহাতেও আমার প্রতিদিবসে মৎসাদি খাইবার সংগতি হয় না। উদ্ভিজ্জভোজী হিসাবে টিকিয়া থাকিতে চেষ্টা করিতেছি।
তিনি স্বর্গদ্বার হইতে মুখটি ফিরাইয়া গম্ভীর স্বরে কহিলেন, তুমি ঈশ্বরের স্মরণ লও। তিনি সাফি। তিনিই মাফি।
ঈশ্বর তখন সরোবরে মৎসাদি লইয়া অতি সুখে ক্রীড়া করিতেছিলেন। কথিত আছে পৃথিবীর সকল মৎসই সনাতন ধর্মাধিকারীর পবিত্র দেবতা। নূহ নবীর আমলে মনুমহারাজের অনুরোধে শ্রীভগবান ওরফে ঈশ্বর এই মৎসরূপ ধারণ করিয়া মনুষ্যসহ সকল প্রাণীদিগকে মহাপ্লাবণ হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন।
ঈশ্বর বলিলেন, বৎস, তুমিও আমার অংশ। এই মৎসও আমার অংশ। চিকেন বলিয়া যে কুক্কুটাদি পিঁয়াজ-রওশুন সহযোগে আহার করিয়া থাকো, তাহাও আমার অংশ বলিয়া জানিবে। আর যে পিয়াজ-রওশুন-জায়ফল নামধারী মসলা ঐ আহার্য রন্ধন করিতে ব্যবহৃত হয়, তাহাও আমার অংশ। আর গাভী দোহন করিয়া ব্রজের কৃষ্ণ ননীচোরা গোপাল সাজিয়া নবী হইয়াছিল, তাহাও আমার অংশ ছাড়া আর কিছুই নহে। এই জগতে যাহা কিছু আছে তাহাতে আমি আছি। তাহারাও আমাতে আছে। আমি ছাড়া এ জগতে অন্য কিছু নাহি।
এইরূপ কহিয়া কোমলপদ্মসদৃশ্য চরণ ফেলিয়া ঈশ্বর আমাকে নিকটস্থ রেস্টুরেন্টে লইয়া গেলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের এইখানে প্রাণীজ আমিষাদি সস্তা কোনটি?
তাহারা উত্তরিল, গোমাংস।
ইহার পরে আমি আর ঈশ্বর অর্থসংকটকালে গোমাংসাদি আহার করিয়া আচমন হেতু গোপাটে চলিয়া যাইতাম।
1 Comments
প্রথম অংশ কই ? শিবকালী ভট্টাচা্যকেআমি একবার আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসে পেয়েছিলাম। রমাপদবাবুর ঘরে। ্তিনি খালি তক্তপোষে বালিশ ছাড়া শুতে বলেছিলেন আমাকে।
ReplyDelete