আমার প্রিয় কবির নাম ইমতিয়াজ মাহমুদ। তিনি হীরক খণ্ডের মতো দ্যূতিময় কবিতা লেখেন। ছোট হোক বড় হোক, ৩০ লাইন বা ২ লাইনের হোক-- তার কবিতা সত্যিকারের কবিতাই হয়ে ওঠে।
ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতা যখন পড়ি তখন আমার শরীরের প্রতিটি কোষও যেন সে কবিতায় মুখর হয়ে ওঠে। কষ্টকল্প বলে ঝামেলা হয় না। তিনি যেন কোনো প্রাচীন ঋষির মতো আকাশবাণী করেন। জলরঙের মতো আটপৌড়ে শব্দে আঁকেন ছবি। আর চোখের সামনে বর্ণিত হয় গল্পগাথা। বাংলাদেশে আবুল হাসান, সিকদার আমিনুল হক, আবিদ আজাদের পরে এরকম শক্তিশালী কবি চোখে পড়ে না।
ইমতিয়াজ মাহমুদের বড়ো শক্তি তার সূক্ষ্ম হিউমার। অন্য কবিরা হিউমার জানে না। তাদের লেখা পড়ে মনে হয় তারা কোষ্ঠকাঠিন্যের চিরকেলে রোগী।
দ্বিতীয় শক্তি হলো, তিনি সহজে সবার কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন। উপেক্ষা করতে পারেন। যে কাউকে করতে পারেন উপহাস।
পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশ না করেও থাকতে পারেন সৃষ্টিশীল ও সতেজ। এবং
তৃতীয় শক্তি হলো ইমতিয়াজ মাহমুদ পাঠককে খোঁজেন না-- পাঠকই তার কবিতাকে খুঁজে বের করে।
তিনি একা। একা এবং একজন প্রকৃত কবি।
...............................................................
ইমতিয়াজ মাহমুদের একটি কবিতা পড়া যাক--
ঈদ
আমার কোন ঈদ নাই। এগার বছর আগে নামাজ পড়তে
যাবার সময় আমার ঈদ চুরি হয়ে গেছে। আমি ঐদিন
সবার মতো পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।
বাড়তি বলতে হাতে একটা তসবিহ ছিলো। ঐ তসবিহ’র
দিকে মন দিতে গিয়ে কোন ফাঁকে ঈদ হারিয়ে ফেলেছি টের
পাই নাই। থানা পুলিশ করার মতো সঙ্গতি বাবার ছিলো না।
তিনি বলেছিলেন মন খারাপ করিস না। সবার ঈদ থাকে না।
এর চেয়ে আমার ঈদটা তুই নিয়ে নে। আমি বললাম আপনি
ঈদ কোথায় পাবেন? আমি তো শুনেছি দাদা বেঁচে থাকতেই
আপনার ঈদ হারিয়ে গেছে। বাবা অপরাধীর মতো বললেন
তা ঠিক আছে, তবে তোর মায়ের ঈদটা আমি চুরি করে রেখেছি!
0 Comments