কুলদা রায়ের কবিতা : সমুদ্র মেয়ে অথবা জমজ বাড়ির আলো

 


সমুদ্র মেয়ে অথবা জমজ বাড়ির আলো

স্কুল থেকেই বালিকারা বাতাসও চিনতে পারে
তাদের দরকার একটি সানগ্লাস
তারা জানে, জল কখনো খণ্ড হয় না
মাঝে মাঝে ফুলে ফুলে ওঠে

 

ম্যানহাটনের লেজে ই-ট্রেনের লাস্ট স্টাপ
এরপর থেকেই থৈ থৈ সমুদ্র
যেখানে প্লেনগুলোও ভয় পায় নিচু হতে
সেইখানে একটি মেয়ে একা হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে
রোদ বৃষ্টি আর অন্ধকারেও তার স্কুল নেই
শুধু কান পেতে শোনে- সাউথ ফেরির ভোঁ...

 

এদেশের মেয়েরা বহুবর্ণিল
সামারে জামাকাপড় ছুড়ে ফেলে
আর গায়ের এখানে ওখানে আকেঁ উল্কি
কানে আইপড

 

সমুদ্র মেয়ে একটিমাত্র তুতেঁ রঙের ঘাঘরা পরেই
পার করলো তার বালিকাপর্ব, শুধু মাথায়
এটে নিয়েছে বেথলেহেমের কাঁটার মুকুট
বিড়বিড় করে বলছে- আমিই পথ, আমিই জীবন...

 

ব্যাটারি পার্কে রাত্রি পার করে যেসব বিষণ্ণ মানুষ
তারা জানে এইসব ছেঁদো কথা
যেদিন তাদের চোখ থেকে পালিয়েছে ঘুম
সেদিন থেকেই বালিকাদের স্কুল বন্ধ
ডানকিন ডোনাটে এরা সবাই কড়া কফি বেঁচে
এই বিষণ্ন মানুষগুলো ব্যাটারি পার্কে
পাথুরে পরীর সামনে বসে থাকে, কফি গেলে
একটি ইঁদুর দৌড়ে গেলেও পরীদের স্তন
কখনো কেঁপে ওঠে না

 

যে পাঁচটি পুরুষ সমুদ্র মেয়েটির মুখোশ পরেছে
তাদের যে কোনো একজনের সংগে
ছবি তোলার দাম পাঁচ ডলার

তাদের চোখেও তুঁতে রঙের সানগ্লাস
কাছে গেলেই পুরুষ পাঁচটি একসাথে বলে ওঠে-
একটু অপেক্ষা করো, বাথরুম সেরে আসি
এই ফাঁকে ডানাহীন পাখিদের সামনে
একজন স্প্যানিশ গায়ক অন্ধের মতো গান করে-
'আমার থাকতো যদি সোনার পাহাড়...'

 

সমুদ্র মেয়েটির কাছে যেসব স্কুল বালিকারা আসে
তাদের প্রত্যেকেরই আছে গুপ্ত মোমবাতি
পাহাড়ের মতো জল ফুলে উঠলেই
ঢেউয়ের মাথায় ভাসে পবিত্র আলোবিন্দু

 

আর ফসফরাসের মতো জ্বলে যায় দুটি জমজ বাড়ি
চারিদিকে ছিটকে পড়ে খণ্ড খণ্ড জল

 

ব্যাটারি পার্কে বিষণ্ন মানুষগুলো বসে থাকে
তাদের মাথায় নানা রঙের উইগ
তারাই সত্যি সত্যি জানে,জলে নয়-
পোড়া ছাইগুলো পড়েছে সমুদ্র মেয়ের চোখে
আর আকাশ ছোঁয়ার আগেই অগ্নিপিণ্ডগুলো
ধরা পড়েছে তার হাতের মুঠোয়

 

সেই থেকে স্কুল বালিকারা চশমাবিহীন
বাতাস থেকে গন্ধ শুকেই তারা বলে-
এখন অগ্নিশিখার চেয়ে পাথরের টুকরো
অধিক দৃশ্যমান

Post a Comment

0 Comments