test



অনুবাদ: বিপ্লব বিশ্বাস

জানি, আমি সুন্দরী নই। আমার কালো চুল ছোটো করে ছাঁটা আর তা এতই পাতলা যে তাতে আমার খুলি ঢাকা পড়ে না। আমার হাঁটার ভঙ্গিতে এমনই একটা তাড়াহুড়ো আর টলকানো ভাব থাকে,দেখে মনে হয়,আমি খোঁড়া। চশমা কেনার সময় ভেবেছিলাম তা বেশ সুন্দর, সুচারু - ফ্রেম কালো, আকারে যেন প্রজাপতির পাখনা - কিন্তু এখন বুঝেছি সেই চশমা কতটাই বেমানান আর তাকে ছাড়তেও পারছি না যেহেতু নতুন একটি কেনার মতো পয়সা নেই হাতে। কোলাব্যাঙের পেটের মতো আমার গায়ের চামড়ার রং আর ঠোঁটজোড়াও সরু। কিন্তু আমি আমার যথেষ্ট বয়স্ক মায়ের মতো কুৎসিত নই। মায়ের মুখটা ছোট্ট, কোঁচকানো আর শুকনো খেজুরের মতো কালচে, আর তার দাঁতের পাটি নড়বড়ে। খাবার টেবিলে তার সামনাসামনি বসা আমার সহ্যই হয় না আর তার মুখ দেখেও মনে হয়, আমার সম্পর্কে মায়েরও একই অনীহা।

বহু বছর যাবৎ আমরা এক সঙ্গে বাড়ির বেসমেন্টে থাকি। মা রাঁধুনি ; আমি ঝিয়ের কাজ করি। কাজের লোক হিসেবে আমরা খুব পোক্ত নই তা সত্ত্বেও কেউই আমাদের ছাড়িয়ে দিতে পারে না কেননা বেশিরভাগ কাজ-মেয়েদের চাইতে আমরা ভালো। মায়ের স্বপ্ন হল, কখনও সে যথেষ্ট টাকাপয়সা জমিয়ে আমাকে ত্যাগ করে গ্রামদেশে চলে যাবে। আমারও সেই একই স্বপ্ন প্রায়, ব্যতিক্রম হল, যখন আমি খুব রেগে যাই বা অসন্তুষ্ট হই তখন খাবার টেবিলে তার বাঁকা আঙুলের দিকে তাকিয়ে আশা করি যে খেতে খেতে সে যেন গলায় খাবার আটকে মারা যায়। তখন তার ছোট্ট গোপন ঘরটায় গিয়ে তার টাকার ভাঁড় ভেঙে নেওয়া থেকে আমাকে আর কেউ আটকাতে পারবে না। আমি তার পোশাক - টোশাক, টুপি সব পরে নেব, বিটকেল গন্ধ বের করার জন্য তার ঘরের জানলা সব খুলে দেব।

গভীর রাতে রান্নাঘরে একা বসে থাকার সময় এইসব কাল্পনিক পোকা যখন মাথায় নড়ে, ঠিক তার পরদিন আমি অসুস্থ থাকি। তখন আবার আমার মা-ই সেবাযত্ন করে, মুখে জল তুলে দেয়, মাছি তাড়ানো জালি দিয়ে মুখে বসা মাছি তাড়ায় - আর এ সবই সে করে রান্নাঘরে তার রোজকার কাজের তোয়াক্কা না করে, আর আমি প্রাণপণ নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে মা আমার দুর্বলতার সুযোগে চুপিসারে দাম্ভিক মজা লুটছে না।

ব্যাপার - স্যাপার যে বরাবর এমনটা ছিল তা নয়। মি.মার্টিন যখন ওপরতলায় বাস করতেন, আমরা খুব সুখী ছিলাম যদিও কদাচিৎ একে অপরের সঙ্গে কথা হত। আমি যে এখনকার চাইতে বেশি সুন্দরী ছিলাম তা নয়, কিন্তু তার সামনে কখনোই চশমা পরতাম না ; সোজা হয়ে দাঁড়ানো আর শোভন সুন্দরভাবে হাঁটার বিষয়টি মাথায় রাখতাম। প্রায়ই হোঁচট খেতাম, পড়তাম মুখ থুবড়ে কেননা ঠিকমতো রাস্তা দেখতে পেতাম না। হাঁটার সময় হাত বেড় দিয়ে মাজা চেপে ধরার কারণে সারা রাত্রি ব্যথা বোধ করতাম। কিন্তু মি. মার্টিনের পছন্দের একজন হয়ে ওঠার এইসকল চেষ্টা থেকে কিছুতেই দমে যেতাম না। এখনকার চাইতে তখন অনেক বেশি জিনিসপত্র ভেঙে ফেলতাম কারণ পার্লারের ফুলদানি ঝাড়াঝুড়ি আর খাবার ঘরের আয়না ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে পরিষ্কার করার সময় আমার হাত কোথায় যাচ্ছে তা দেখতে পেতাম না। কিন্তু মি. মার্টিন এসব খুব একটা খেয়াল করতেন না। আয়না ভাঙার আওয়াজ পেলে তিনি ফায়ারপ্লেসের পাশের চেয়ারে বসে চমকে উঠে হতবাক হয়ে সিলিঙের দিকে একভাবে তাকাতেন। কিছুক্ষণ পর চকচকে কাচের টুকরোগুলোর পাশে যখন দম আটকে বসে থাকতাম তিনি তাঁর শাদা দস্তানা পরা হাত দিয়ে কপাল মুছে ফের বসে পড়তেন।

আমার সঙ্গে তিনি কখনোই একটি কথাও বলতেন না কিন্তু অন্যের সঙ্গেও তাঁকে কথা বলতে শুনতাম না। কল্পনা করতাম, তাঁর কণ্ঠস্বর বেশ উত্তপ্ত আর কিছুটা কর্কশ। আবেগেঘন মুহূর্তে তিনি তোতলাতে থাকেন। আমি তাঁর মুখও কখনও দেখিনি কারণ তা মুখোশের আড়ালে ঢাকা থাকত। মুখোশটা ছিল রংচটা আর রবারের মতো। তাঁর মাথার প্রতিটা ইঞ্চি ঢেকে দিয়ে এই মুখোশ জামার কলারের নিচ অবধি চলে যেত। প্রথম প্রথম এই দৃশ্য আমার মেজাজ বিগড়ে দিত। কার্যত প্রথম যখন তা দেখি, মাথা ঠিক রাখতে না পেরে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যাই। এঁর প্রতিটা বিষয়ই আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল - হাঁ-মুখ, শুকনো খুবানির মতো ছোটো ছোটো কান, জবড়জং ভাবে রাঙানো কালো চুল যা চাঁদিতে ঢেউ খেলে জমে আছে, আর প্রকট চোখের কোটর। কারও লালিত স্বপ্নে ভয় ছড়িয়ে দিতে এ সবই যথেষ্ট আর শুরুতেই তা আমাকে বিছানায় ফেলে ছটফটাতে বাধ্য করেছিল যতক্ষণ না বিছানার চাদর আমার গলায় জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে।

একটু একটু করে আমি এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম। মি. মার্টিনের অন্দরের মানুষটিকে কল্পনা করতে শুরু করলাম। হাতের বইটি নিয়ে দিবাস্বপ্নে মগ্ন অবস্থায় তাঁকে ধরে ফেলার সময় নজরে এল তাঁর ধূসর গালে গোলাপি আভা ছড়িয়ে। কাজের সময় তিনি যখন আমাকে লক্ষ করছিলেন তখন আবেগ, করুণা আর প্রশংসায় তাঁর মুখটি যেন কেঁপে কেঁপে উঠছিল। তখন তাঁর দিকে চকিতে চোখ ফেলে করে মাথা ঝাঁকাতাম আর দেখতাম তাঁর মুখ জুড়ে মৃদু হাসি ছড়িয়ে।

কিন্তু মধ্যেমাঝে যখন দেখতাম তাঁর পাঁশুটে ধূসর চোখদুটো আমাতে সেঁটে আছে, আমার এই ভেবে অস্বস্তি হত যে আমি পুরোপুরি ভুল আর হয়তো তিনি কখনোই আমার অভিব্যক্তিতে সাড়া দেননি - যে কিনা এক বোকাসোকা অপটু ঝি ; আর যদি কোনও একদিন অন্য একটি মেয়ে তাঁর ঘরে চলেফিরে বেড়িয়ে ঝাড়াঝুড়ো করে তখনই তিনি একমাত্র বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে দেখে আবার পড়া চালিয়ে যাবেন, পরিবর্তন লক্ষ না করেই। এই সন্দেহে কেঁপে উঠে আমি বিবশ হাতে আঁতিপাঁতি খুঁজে মরতাম আর ঝাঁটঝুট দিতাম যেন তেমন কিছুই ঘটেনি আর এতেই তাড়াতাড়ি সন্দেহ দূর হয়ে যেত।

মি. মার্টিনের জন্য বেশ বেশি কাজ করতে লাগলাম আমি। আগে যেখানে তাঁর কাপড়জামা ধোপাবাড়ি পাঠাতাম পরে আমি নিজেই সে সব কাচাকুচি করে দিতাম, যদিও খুব ভালো তা পারতাম না। তাঁর লিনেনের পোশাক নোংরা হয়ে পড়ল আর ট্রাউজার্স সব ঠিকমতো ইস্তিরি হত না, কুঁচকে থাকত ; কিন্তু তিনি কোনও আপত্তি করতেন না। এভাবে করতে গিয়ে আমার হাতের চামড়া কুঁচকে উঠল, হাত ফুলে ঢোল হল যদিও আমি তাতে কিছু মনে করলাম না। আগে যখন গ্রীষ্মকালে এক মালি সপ্তাহে একদিন এসে বাগানের ঝোপঝাড় ছাঁটত আর শীতকালে গোলাপের ঝাড়গুলি মোটা ক্যানভাস কাপড় দিয়ে ঢেকে দিত, পরে সেই মালিকে ছাড়িয়ে দিয়ে সেইসব কাজের দায়িত্ব নিজেই নিলাম আর দিনের পর দিন বিশ্রী আবহাওয়ার মধ্যেও বাগানের কাজ করে যেতে লাগলাম। প্রথম প্রথম বাগান শুকিয়ে যেতে লাগল কিন্তু কিছুকাল পর তা ফের সতেজ হয়ে উঠল : নানা রঙের বুনো ফুল গোলাপগুলিকে হটিয়ে দিয়েছিল আর বাগানের কাঁকুরে পথজুড়ে ছিল ঘন সবুজ ঘাস যাতে হাঁটাচলায় বাধা আসছিল। আমি বেশ শক্তপোক্ত হয়ে উঠলাম, গোটা মুখ দাগড়া দাগড়া হলেও, আঙুলের চামড়া শুকিয়ে ফেটে গেলেও বা অধিক কাজের চাপে দেহ শুকিয়ে কাঠ হলেও কিংবা সেখান থেকে ঘোড়ার গায়ের মতো দুর্গন্ধ বেরোলেও আমার কিছু মনে হল না। মা অবশ্য গজগজ করতে লাগল। কিন্তু আমি বোধ করলাম যে আমার শরীর এক তাৎপর্যহীন উৎসর্গ বই কিছু নয়।

কখনও কখনও আমার নিজেকে মনে হতে লাগল মি. মার্টিনের কন্যা, কখনও তাঁর বউ আবার কখনও তাঁর কুত্তা। আমি ভুলে গেলাম যে আমি সামান্য ঝিয়ের বেশি কিছু নই।

মা কখনও তাঁকে চোখ মেলে দেখেনি,একটিবারের জন্যও নয় ; এবং তাতেই তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক বেশি রহস্যময় হয়েছে। দিনের ভাগে মা ধোঁয়ায় ভরা নিচের রান্নাঘরে কাটিয়েছে, তাঁর জন্য খাবারদাবার বানিয়েছে আর ঘাবড়ে গিয়ে মাঢ়ী চাবিয়েছে। একমাত্র সন্ধ্যার দিকে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে জোর বাতাসে উড়ে আসা লাইলাক ফুলের ঝাড়টিকে সোহাগে জড়িয়ে ধরেছে, আকাশে মেঘের দিকে তাকিয়ে। কখনও কখনও আমার ভেবে অবাক লাগত কীভাবে সেই মানুষটার জন্য মা নাগাড়ে কাজ করে যেত যাকে কখনও চোখেই দেখেনি কিন্তু এটাই ছিল তার পদ্ধতি। মাসের শেষে খামে ভরে তার মাইনেটা এনে দিতাম আর সে তা হাতে নিয়ে আগের টাকার মধ্যে লুকিয়ে ফেলত। মা আমাকেও কখনও জিজ্ঞেস করেনি মার্টিন কেমন আর আমিও আগ বাড়িয়ে কখনও কিছু বলিনি। আমার মনে হয় মা তাঁর সম্পর্কে কখনও কিছু জানতে চায়নি কেননা আমি কে সেটাই মা কখনও বুঝে উঠতে পারেনি। হয়তো মা ভাবত, অন্যান্য মহিলাদের মতো সে-ও স্বামী ও পরিবারের জন্য রান্নাবান্না করে আর আমি তার ছোটো বোন। কখনও সে পাহাড় বেয়ে নেমে যাওয়ার কথা বলত যদিও আমরা পাহাড়ের ওপর বাস করতাম না বা বলত আলু খুঁড়ে তোলার কথা যদিও আমাদের বাগানে কোনও আলুর আবাদ ছিল না। এতে আমি উত্তেজিত হয়ে হঠাৎ জোর চেঁচিয়ে বা তার মুখের সামনে দাঁত খিঁচিয়ে তাকে এমন সব আজগুবি ভাবনা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করতাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হত না এবং আমাকে অপেক্ষা করতে হত যতক্ষণ না শেষ পর্যন্ত মা স্বাভাবিকভাবে আমাকে গালিগালাজ জুড়ে দিত। মা যেহেতু মি. মার্টিন সম্পর্কে কোনও কৌতূহল দেখাত না আমি বেশ শান্তি করে ইচ্ছেমতো তাঁর যত্নআত্তি করতে পারতাম, তিনি যখন ক্বচিৎ বাড়ির বাইরে হাঁটতে যেতেন, তাঁর সঙ্গে ঝুলে থাকতাম, রান্নাঘরের দোল- দরজার পিছনে অপেক্ষা করে ফুটো দিয়ে তাঁকে লক্ষ করতাম, তাঁর ধুলোপড়া জ্যাকেট বুরুশ করতাম বা চটির সুকতলা থেকে ধুলো পরিষ্কার করতাম।

কিন্তু এই সুখের সময় চিরকাল স্থায়ী হয়নি। এক মধ্যগ্রীষ্মের রোববার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম,যে হলঘরে শুয়েছিলাম সেখানে উজ্জ্বল রোদের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাইরের ঝোপে বসে থাকা ছোট্ট রেন পাখির গান শুনতে লাগলাম,দেখতে লাগলাম, হলঘর পথের শেষ প্রান্তে ভাঙা জানলা দিয়ে একটি সোয়ালো পাখি উড়ে উড়ে ঢুকছে আর বেরুচ্ছে। আমি উঠে পড়ে নিয়মমাফিক দাঁত মেজে মুখ-টুখ ধুয়ে নিলাম। বেশ গরম পড়েছে। সবে ধোওয়া একটি গরমের পোশাক পরে পালিশ করা চামড়ার পাম্পশু পায়ে গলিয়ে নিলাম। জীবনে শেষবারের মতো গোলাপজলে গায়ের কটুগন্ধ মারলাম। গির্জার ঘন্টা থেকে দশটা বাজার ঝালাপালা আওয়াজ আসতে লাগল। ওপরতলায় যখন টেবিলে তাঁর সকালের খাবার দিতে গেলাম, মি. মার্টিনকে দেখতে পেলাম না। তাঁর চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম, মুহূর্ত যেন ঘন্টা ছাড়িয়ে যায়। আমি গোটা বাড়ি খুঁজতে লাগলাম। প্রথমে ভীরু পায়ে, তারপর উন্মত্ত তাড়াহুড়োয়, যেন আমার প্রতিটি ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছেন ; সর্বত্র তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। শুধু যখন দেখলাম ওয়ার্ডরোবে তাঁর জামাকাপড় কিছু নেই আর বইয়ের তাকও খালি, তখনই মানতে বাধ্য হলাম যে তিনি চলে গেছেন। এমনকি তখন ও তার পরের দিনগুলোতেও আমি ভেবে চলেছিলাম যে তিনি ফিরে আসবেন।

এক সপ্তাহ পর তিন চারটে নোংরা ট্রাঙ্ক নিয়ে এক বুড়ি এল, এসেই তার ছোটো ছোটো অকেজো গয়নাগুলো উনুনের ওপরের তাকে সাজিয়ে রাখতে লাগল। তখন বুঝলাম,কোনও ব্যাখ্যা না দিয়ে, আমার মনোভাবকে পাত্তা না দিয়ে, এমনকি কোনও আর্থিক উপহার না দিয়ে জিনিসপত্র গোছগাছ করে মি.মার্টিন চিরতরে চলে গেছেন।

এটা শুধু একটা ভাড়াবাড়ি। মায়ের সঙ্গে আমি ভাড়ায় থাকি।

লোকজন আসে আর যায় আর কয়েক বছর অন্তর অন্তর নতুন নতুন ভাড়াটে আসে। আমার আশা করা উচিত ছিল, একদিন মি.মার্টিনও এই বাড়ি ছেড়ে যাবেন। কিন্তু আমি তা আশা করিনি। সেইদিনের পর থেকে আমি দীর্ঘকাল অসুস্থ ছিলাম আর আমার মা যে আমার কাছে আরও বেশি করে জঘন্য হয়ে উঠেছিল, সে আমাকে আমার পছন্দের মাংস বা সবজির ক্বাথ ও ঠান্ডা শশা খাওয়াতে খাওয়াতে হয়রান হয়ে গিয়েছিল। অসুস্থতার পর আমাকে শবদেহের মতো লাগত। নিশ্বাসে দুর্গন্ধ ছড়াত। বিরক্তিতে মা মুখ ঘুরিয়ে চলে যেত। জবড়জং অবস্থায় ঘরে এলে ভাড়াটিয়ারা কেঁপে উঠত, দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ত এমনকি যদিও আমার নাকের সরু খাঁজে চশমা প্রজাপতির মতো বসে যেত ফের।

আমি কখনোই ভালো চাকরানি ছিলাম না, কিন্তু এখন, যদিও আপ্রাণ চেষ্টা করি, আমি এতটাই এলোমেলো যে কয়েকজন ভাড়াটে বিশ্বাস করে, আমি আদৌ ঘরদোর পরিষ্কার করি না আর অন্যেরা ভাবে, আমি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের অতিথিদের সামনে তাদের বিব্রত করতে চেষ্টা করি। কিন্তু তারা যখন আমাকে তিরস্কার করে আমি উত্তর করি না। শুধু উদাসীনভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজ করে চলি। আমার এমন হতাশার কথা তারা কখনোই জানতে পারেনি।

--------
মূলগল্প:  The Housemaid : Lydia Davis


লেখক পরিচিতি: লিডিয়া ডেভিস (৫ জুলাই ১৯৪৭) একজন আমেরিকান লেখিকা যাঁর ছোটগল্পগুলি অনেক সময়েই এক বা দুই পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ছোটগল্প ছাড়া তিনি উপন্যাসও লিখেছেন এবং ফরাসি এবং অন্য ভাষা থেকে অনুবাদও করেন।

অনুবাদক পরিচিতি: বিপ্লব বিশ্বাস ( জন্ম: ১৭.০১.১৯৫৪) মৌলিক তথা ভাষান্তরিত গল্প আঙিনায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতাপুষ্ট। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ও অবসৃত প্রধানশিক্ষক। নির্জন সৃজনে আস্থাশীল গল্পকারের ১৯৭৬-এ প্রথম লিখিত গল্পই ' সমতট ' আয়োজিত সারা বাংলা গল্প প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল। তিনি কেন্দ্রীয় সাহিত্য অকাদেমির নথিভুক্ত অনুবাদক। এ রাজ্য,ভিনরাজ্য তথা ভিনদেশের ছোটো, বড় সাময়িক ও দৈনিক পত্র পত্রিকাতে তার গল্প প্রবন্ধ সসম্মানে প্রকাশিত। নানাবিধ টানাপড়েনে তার কলমচারিতা নিয়মিত হতে পারেনি। তার তিনটি মৌলিক, দুটি অনূদিত গল্পগ্রন্থ ও একটি অনূদিত উপন্যাস প্রকাশিত। সেই অর্থে সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি কোনও প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার পাননি।

Post a Comment

0 Comments