বইপড়া: মহাভারতের কথা অমৃত সমান


কুলদা রায়

মহাভারত আমার প্রিয় গ্রন্থ। বাল্যে যখন এক ঘরে আমাদের জায়গা হত না, আমার তখন স্থান হত আমার জ্যেষ্ঠ ঠাকুরমা আর ঠাকুরদার মাঝে। জ্যেষ্ঠ ঠাকুরদাকে বললাম—বড় দাদু। আর জ্যেষ্ঠ ঠাকুরমা—বড়দিদি। এই বড়দাদু ছিলেন পুরো দস্তুর কৃষক। প্রথম স্ত্রী মারা গেলে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন মোল্লাকান্দি। এই বড়দিদি ছিলেন কালো। নিঃসন্তান। তিনি জলের মেয়ে। থৈ থৈ কালো জলের। চারিদিকে সবুজ ধানক্ষেত। মাঝখানে একটি বাড়ি। এই জল দেখে বহুবার আমার প্রাণ উড়ে গেছে। এর দুটো গ্রামের পরে আমার মামা বাড়ি। এই জলহাওয়া ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন সত্য নাই।


রাতে বড় দাদু ঘুমিয়ে পড়ত মুখটি হা করে। ফোকলা মুখ। তখন বড়দিদি আমাকে গল্প শোনাত। দীর্ঘ সেসব গল্প। রূপকথা। রামায়ন। মহাভারত। পুরাণকথা। বড়দিদি শুধু সই করতে জানত। কিন্তু যখন গল্প বলত তখন বইয়ের পাতা থেকে গল্পের চরিত্ররা আমাদের চারপাশে নেমে পড়ত। কখনো গলা গাঢ় করে, কখনো উত্তেজনায় থরথর করে কেঁপে কেঁপে, কখনো হাহাকারে, কখনো কান্নাকণ্ঠে, কখনো হা হা হাসিতে। এত বড় গল্পকার আমার জীবনে এখনো পাই নি। আমার গল্পের ভুবনটি এই বড়দিদিন কাছ থেকে পাওয়া।
এই বড়দিদি একদিন নিঃস্ব হয়ে গেল। ততদিনে বড়দাদু মারা গেছে। নিঃসন্তান হিন্দু বিধবার জন্য কে কবে চিন্তা করেছে? তার গরুটি, ঢেঁকিটি, ছোট্ট রান্নাঘরটি, পাথরের থালাটি আর কাঁঠাল কাঠের পিঁড়িটি এবং দালানের দুটি রুম দখল হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখতে পেল, হা কৃষ্ণ, এই যে এতকাল ধরে যা আমার বলে আঁকড়ে ধরেছিলাম—তা আজ আমার নিজের কিছুই নয়? বড়দিদি চলে গেল কোথায় জানি না। যারা জানতে পারত, তারা তখন ধর্মাধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। মানবাধিকার নিয়ে মগ্ন। সে বড় নির্মম গল্প। সে গল্প অন্য সময়ে হবে। শুধু আজ জীবনের মধ্যযামে এসে বুঝতে পেরেছি, লোভই মানুষের প্রকৃত ধর্ম। চারিদিকে শুধু লোভ লক লক করে। লোভের উপরে কথা নেই। ধর্মে তাই অনাগ্রহ। বাতিল। আমার কাছে ধর্ম হল—ভাতৃঘাতি গল্পমাত্র। অন্তর্ঘাতের ললিত বয়ন।

অক্ষর শেখার আগেই আমার মর্মে গেঁথে গেছে মহাভারতের কথা। যখন একটু একটু বড় হচ্ছি—তখন একবার মৃত্যু আমাকে কিছুদিন হাতে নিয়ে লোফালোফি করেছিল। সে সময়ে আমার বাবা—একদিন ছলছল চোখে জানতে চেয়েছিল—তোর কী ইচ্ছে রে খোকা? ক্ষীণস্বরে কেন জানি বলেছিলাম, মহাভারত। মহাভারত।
মায়ের কাছে ছিল আমার বৃত্তির টাকা। সেই প্রথম আমার জীবনে বই কেনা হল—মহাভারত আর রামায়ণ। আর প্রেমানন্দ ডাক্তার দিয়েছিলেন লাল একটি পবিত্র বাইবেল।

ছায়া পড়লে সে সময় আমার মা আমাকে শুইয়ে দিয়েছে পেয়ারা তলায়। হালকা হাওয়ায় জলের মধ্যে পেট ডুবিয়ে শুয়ে থাকি। আর নেড়ে চেড়ে দেখি কাশীরাম দাস ভনের মহাভারত। পেয়ারা ডালে একটি দাঁড় কাক ঝিমোয়। শুনতে পাই আমার বড়দিদি বইয়ের পাতা থেকে বর্ণন করে যাচ্ছে—ব্যাসদেবের জন্মকাহিনী, মহামতি ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা, যূধিষ্ঠিরের ধর্মের হাত ধরে বেড়ে ওঠা, আর কৌরবদের ক্রুরকথা। কৃষ্ণ এসেছেন রথের রশি ধরে। সারি সারি সৈন্য। অর্জুন বললেন, সখা, থামাও রথ। আমি দেখতে চাই কাদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করতে এসেছি। অর্জুন দেখলেন, তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পিতামহ ভীষ্ম। ভাই দুর্যোধন। মাতুল শল্ব। আত্মীয়স্বজন আর আর বন্ধুজন। অর্জুন হতাশ। অস্ত্র ফেলে বলে উঠলেন, এদেরকে হত্যার বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না।

কৃষ্ণ মানবরূপী ভগবান। তিনি মুহুর্তের মধ্যে দেখালেন বিশ্বরূপ। এই বিশ্বে প্রতিদিন ডুমুর ফলের ন্যায় শত সহস্র লক্ষ প্রাণীর জন্ম হচ্ছে। আবার প্রতিদিন শত সহস্র লক্ষ প্রাণীর লয় হচ্ছে। সবই পূর্ব নির্ধারিত। অর্জুনরা শুধু অভিনয় করে যাচ্ছেন। কৃষ্ণ বলছেন, দেখো অর্জুন, তোমার এই মহাতেজা পিতামহ ভীষ্ম, অই দ্যাখো, তিনি মরে পড়ে আছেন। দেখতে পাচ্ছ—অই যে দুর্যোধন। আর দেখো, দেখো, ছিন্ন মস্তকে ধুলোয় লুটাচ্ছেন গুরু দ্রোণাচার্য। তুমি নিমিত্ত মাত্র। যাও, বৎস, যুদ্ধ কর। হত্যা কর। ধর্ম রক্ষা কর। ধর্মের জন্য কখনো হত্যাও পবিত্র কর্ম!

অর্জুন বিষণ্ন বদনে যুদ্ধে যাচ্ছেন। একটানা আঠার দিন যুদ্ধ হল। মৃত্যুর স্তুপ জমে গেছে কুরুক্ষেত্রে—যুদ্ধক্ষেত্রে। ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব এবং জ্ঞানী যুধিষ্ঠির যুদ্ধ করলেন। কিন্তু রাজা হলে্ন একা যুধিষ্ঠির। তিনি হলেন ধর্মরাজ। গুরু দ্রোণাচার্যকে হত্যা করতে তিনি মিথ্যে বলেছিলেন। এটাও ধর্মের সূক্ষ তত্ত্ব বটে। এই ধর্মের নাম কি? লোভ। কেউ ধর্মের নামে লোভ করছেন। কেউ রাজত্বের নামে। কেউ প্রেমের নামে। কেউ যৌনতার নামে। কেউ স্নেহের নামে-- শ্রদ্ধার নামে। কেউ মহত্বের নামে। কেউ অমৃতের নামে। দেবত্বের নামে--ঈশ্বরত্বের নামে। লোভ ছাড়া আর কি আছে এই জগতে?
আমি তখন দেখতে পাই, জননী গান্ধারী একাকী দাড়িয়ে আছেন যুদ্ধক্লান্ত কুরুক্ষেত্রে শ্মশানক্ষেত্রে। সম্মুখে নিহত শতপুত্র। শিয়ালাদি তার সামনে মৃতদেহগুলি নিয়ে টানটানি করছে। গান্ধারীর চোখ বন্ধ। চোখ খুললেই ক্রোধের আগুনে ভষ্মীভূত হয়ে যাবেন যুদ্ধেজয়ী যুধিষ্ঠিরা, ভীম ,অর্জুন-সবাই। কৃষ্ণ তাকে শান্ত করছেন। আর দেখতে পাচ্ছি, হতভাগ্য পিতা কপালে করাঘাত করে হাহাকার করছেন। এই যুদ্ধের আয়োজনে তার অবদান কি কম ছিল!

জননী গান্ধারী। জন্ম গান্ধারপ্রদেশে।গান্ধার মানে আজকের আফগানিস্তানের কান্দাহার। আর যিনি এই মহাকাব্যের নায়িকা—জন্মমাত্রেই যিনি রজঃস্বলা সেই দ্রৌপদী দক্ষিণ ভারতের মেয়ে। অতি রূপবতী। কিন্তু কালো বলে তার নাম—কৃষ্ণা। তাঁকে জয় করে আনলেন অর্জুন—কিন্তু পতি হল পাঁচ ভাই। মহাভারতে বাংলাকে শুধু দেখতে পাওয়া যায়স যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু সৈন্যের তালিকায় আর অশ্বমেধ যজ্ঞের নিমিত্তে অর্জুনের পরাভূত রাজ্যের স্থানে। মহাভারত বাংলার কাহিনী নয়। প্রাচীন ভারতের কথা। আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের মানুষ কথা। পরমাপ্রকৃতির ইতিহাস। এই জীবন স্নেহ-মমতায়, শৌর্য-বীর্যে, মহত্ব-ক্ষুদ্রতা, ক্ষমা-হিংস্রতা, করুণা-নিষ্ঠুরতা, নিষ্কাম কর্ম-ভোগের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনন্তের অংশ হয়ে আবর্তিত হচ্ছে। পিছন ফিরে তাকানোর কেউ নেই। আছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান। অস্ত্র নয়—সবাই পরাভূত হয় অবশেষে বাক্যের কাছে।

এই বাক্যস্বরূপ একটি বক পাখি সরোবরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির জলে নেমে অঞ্জলি ভরে জল পান করতে উদ্যত। বক পাখিটি বলছে, আমার বাক্যের উত্তর দাও। তারপর জলপান করো।
অঞ্জলি থেকে জল গড়িয়ে পড়ে গেল যুধিষ্ঠিরের। তিনি দেখলেন বাক্যের কাছে পরাজিত হয়ে জলে ভাসছে তার মহাতেজা ভাই—ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। স্বর্গের ইন্দ্রও মাঝে মাঝে এদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। যুধিষ্ঠির বললেন, বলুন, কী জানতে চান?
--এ জীবনে আশ্চর্য কী?
--‘জন্মিলে মরিতে হইবে’। তবু সবাই বাঁচতে চায়—এই হল আশ্চর্য। আহা, বক পাখিটির কারণে আমরা জীবনের আশ্চর্যটি জানতে পারছি। বুঝতে পারছি, পাখিও কখনো কখনো মানুষের চেয়ে শ্রেয়তর।
এই তো মহাভারত। অসংখ্য আখ্যান নিয়ে লিখিত হয়েছে এ গ্রন্থটি। একটি মালার মত। পরস্পর সম্পর্কিত। কোন কথা ও উপকথা অনাবশ্যক নয়। বোঝা যায় লেখক বা লেখকবৃন্দ ব্যাসদেব অনেক পরিকল্পনা করে লিখে গেছেন। এ কাহিনী অতি পুরাতন। আবার পুরাতন নয়। এ কাহিনী এ সময়ের। এ কাহিনী আমার তোমার। কোন ছিন্নসূত্র নেই। কেবল জন্মসূত্র হত্যাসূত্রে আবর্তিত হই নিজেই নিজের মধ্যে। অনন্তের মধ্যে।

মহাভারতকে সংহিতা অর্থাৎ সংগ্রহগ্রন্থ বলা হয়। যে সকল খণ্ড খণ্ড আখ্যান ও ঐতিহ্য পুরাকালে প্রচলিত ছিল তাই সংগ্রহ করে মহাভারত সংকলিত হয়েছে। এতে কিছু দার্শনিক কথাবার্তা আছে। তা আধ্যাত্মবিদ্যার্থীদের অধ্যয়নের বিষয়। প্রত্নন্বেষীদের কাছে মহাভারত অতি প্রাচীন সমাজ ও নীতি বিষয়ক তথ্যের অনন্ত ভাণ্ডার। ভুগোল জীবতত্ত্ব পরলোক প্রভৃতি সম্বন্ধে প্রাচীন ধারণা কি ছিল তাও এ গ্রন্থ থেকে জানা যায়। রাজশেখর বসু বলেছেন—প্রচুর কাব্যরস থাকলেও মহাভারতকে মহাকাব্য বলা হয় না, ইতিহাস নামেই এই গ্রন্থ প্রসিদ্ধ।

শাস্ত্রবিশ্বাসী প্রাচীনপন্থী পণ্ডিতগণের মতে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধর কাল খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের কাছাকাছি এবং তার কিছুকাল পরে মহাভারত রচিত হয়। ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের মতে আদিগন্থের রচনাকাল খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দের মধ্যে। খ্রীষ্টজন্মের পরেও তাতে অনেক অংশ যোজিত হয়েছে।

মহাভারতকথা স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ব্যাপারের বিচিত্র সংমিশ্রণ। পড়তে পড়তে মনে হয় আমরা এক অদ্ভুত স্বপ্নদৃষ্ট লোকে উপস্থিত হয়েছি। সেখানে দেবতা আর মানুষের মধ্যে অবাধে মেলামেশা চলে। ঋষিরা হাজার হাজার বছর তপস্যা করেন এবং মাঝে মাঝে অপ্সরার পাল্লায় পড়ে নাকাল হন। তাদের তুলনায় বাইবেলের মেথুসেলা অল্পায়ু শিশুমাত্র। যজ্ঞ করাই রাজাদের সব চেয়ে বড় কাজ। বিখ্যাত বীরগণ যে সকল অস্ত্র নিয়ে লড়েন তার কাছে আধুনিক অস্ত্র তুচ্ছ। লোকে কথায় কথায় শাপ দেয়। সে শাপ ইচ্ছে করলেও প্রত্যাহার করা যায় না। স্ত্রীপুরুষ অসংকোচে তাদের কামনা ব্যক্ত করে। পুত্রের এতই প্রয়োজন যে ক্ষেত্রজ পুত্র পেলেও লোকে কৃতার্থ হয়। কিছুই অসম্ভব গণ্য হয় না। মনুষ্যজন্মের জন্য নারীগর্ভ অনাবশ্যক। মাছের পেট, শরের ঝোপ বা কলসীতেও জরায়ুর কাজ হয়।

বড় হলে পড়ি কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত। তিনি পণ্ডিতদের দিয়ে গদ্যে অনুবাদ করেছিলেন। অসাধারণ সে গদ্য পড়ে মনে হয়—মহাভারত পদ্যে নয়—গদ্যে প্রস্ফুটিত হয় বিশালত্বের রূপরস গন্ধসমেত। আরও পরে রাজশেখর বসুর মহাভারত সারানুবাদটি হাতে আসে। তাঁর মহাভারতের ভাষা সাধারণের—অমৃত সমান। বাবার সঙ্গে পড়েছি খগেন্দ্রনাথ মিত্রের পাঞ্চজন্য। কৃষ্ণের শঙ্খের নাম পাঞ্চজন্য। কৃষ্ণপ্রধান আখ্যান বর্ণিত এ গ্রন্থে। আমার বৃদ্ধ শ্বশুর কাউকে দিতেন না শাম্ব বইটি। শাম্ব সমরেশ বসু--কালকূটের লেখা। শাম্ব কৃষ্ণপুত্র। আর সুবোধ ঘোষের ভারত প্রেমকথা মহাভারতের প্রেমিক প্রেমিকাদের অজর আখ্যান—বিশেষভাবে নির্মিত ভাষায় রচিত। এ বইটি আয়োজন করে পড়তে হয়। শকুন্তলার জন্য কতবার যে কেঁদেছি—তার বিদায় বেলায় হরিণ শিশুটির জন্য, নীলবর্ণ বন্য লতাটির জন্য, শান্ত আশ্রমটির জন্য। আর রবীন্দ্রনাথের বিদায় অভিশাপ মর্মরিত হয়ে আছে আমার বেড়ে ওঠার কাল।

মনে পড়ে রাতে চাঁদ উঠেছে। ফুল ফুটেছে। হালকা হাওয়ার মধ্যে আমরা বসে আছি চবুতরায়—শুয়ে আছি বারান্দায়—উঠোনে—মাদুরে অথবা ঘাসে। রেডিওতে শুনতে পাচ্ছি ---অশ্বত্থামা ঘোড়া ছুটিয়ে চলে এসেছেন সরোবরের পাড়ে। দুর্যোধন ভগ্ন উরু নিয়ে মৃত্যু প্রহর গুণছেন। তার সামনে পাঁচটিঁ ছিন্নমস্তক রেখে প্রণতি জানালেন অশ্বত্থামা। ততদিনে যুদ্ধ শেষ।

পাঁচটি ছিন্নমুণ্ড। রক্ত ঝরছে। দুরাত্মা দুর্যোধন হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন, এরা কারা? কাদের কাটা মুণ্ডু নিয়ে এসেছ অশ্বত্থামা? এরা তো যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব—পঞ্চভ্রাতা নয়। তুমি আমাকে খুশি করতে কাদের হত্যা করেছ?
নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করেছে অশ্বত্থামা। নিষ্পাপ শিশু হত্যা ছাড়া এ জগতে আর কোন ইতিহাস আছে কি দুর্যোধন? এ্টা মনোজ মিত্রের কাব্য নাটক অশ্বত্থামা। তখন আমার হাত ধরে আছে আছে বাবা। বুঝতে পারছি নাটকটি শুনতে শুনতে তিনি কাঁদছেন। চোখ থেকে জল ঝরছে। লোভ করে কী ধর্ম প্রচারিত হল দুযোর্ধন! যুধিষ্ঠির! অথবা কৌশলী ভগবান কৃষ্ণ? দ্রৌপদী যখন নাথবতী অনাথ হয়ে শাঁওলী মিত্রের কণ্ঠে হাহাকার করছেন, তখন আমার বয়স্ক মা উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। ধর্মাধর্ম কি? হিংসা? ক্রুরতা? নিষ্ঠুরতা? প্রতারণাপূর্ণ যাপন?
এইখানে এসে থমকে যেতে হয়। এইকালে গবেষক কলিম খান এসে যান। তার বয়ানের মর্ম থেকে বুঝতে পারি—মহাভারত কোন ধর্ম কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ যেমন লিখেছেন—‘ইহা কোনও ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিহাস।‘’সে ইতিহাসটি ক্রিয়ার্থবিধিতে লেখা। সে লেখার ভেতরের লেখাটি বুঝতে হলে পরমাভাষা জানা প্রয়োজন। সে ভাষাটি কলিম খান আবিষ্কার করে ফেলেছেন। এখন অপেক্ষা কেবল—নতুন ভাষ্যটি কখন কেবা নির্মাণ করবেন আমার জন্য, আমাদের জন্য—আগামীর জন্য। সে ভাষ্যটি পরমাপ্রকৃতির। মহাপ্রাণের। অনন্তের।

কেননা সৌতি বললেন , কয়েকজন কবি এই ইতিহাস পূর্বে বলে গেছেন, এখন অপর কবিরা বলছেন, আবার ভবিষ্যতে অন্য কবিরা বলবেন।


২০১০

Post a Comment

0 Comments