চিরকুট : টমাসমানের বুদ্ধিজীবীতা


 '১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত হিটলারের জার্মানীতে যেসব বই প্রকাশিত হয়েছিল সবই ছিল অপাঠ্য, জঞ্জাল ও স্পর্শেরও অযোগ্য। রক্তের ছিটে আর লজ্জার গন্ধ লেগে আছে তাদের গায়ে। এসব ধ্বংস করে ফেলা উচিত।'


বলেছিলেন জার্মান লেখক টমাস মান। তিনি নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন অ-রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে। মনে করতেন, লেখক-শিল্পীদের রাজনৈতিক বিষয়াদিতে থাকার দরকার নেই। বাদ-প্রতিবাদেও তিনি যাবেন না। রাজপথের মিছিলে তার নামা সাজে না। লেখকরা লেখক মাত্রই। লেখাই তাদের একমাত্র কাজ। আর কিছু নয়।
টমাস মান ১৯২৯ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এরপরই তিনি পৌরাণিক চরিত্র জোসেফকে নিয়ে মহাউপন্যাস লেখার জন্য বাইবেল পড়তে শুরু করলেন। পুরাতাত্ত্বিক অনুসন্ধান করতে তিনি মিসর ও প্যালেস্টাইন ভ্রমণ করেন।
যখন মহাউপান্যসটির প্রথম খণ্ড শেষ করে এনেছেন তখন জার্মানীতে হিটলারের নাৎসীরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। টমাস মান আর জার্মানীতে ফিরে এলেন না। জুরিখে চুপচাপ বসবাস করতে শুরু করলেন। তার ছেলেমেয়েরা ও বড় ভাই টমাস মানকে হিটলারের নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ প্রকাশ করতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি সেটা করতে রাজী হননি।
কিন্তু যখন হিটলারের বাহিনী শরনার্থীদের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালালো, তখন তিনি সভ্যতার শত্রুরূপে নাৎসীদের নিন্দা করলেন। সেটা ১৯৩৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। তখন জার্মানীতে টমাস মানের রচনাকে হিটলার অ-জার্মান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে । তিনি যদি সে সময়ে জার্মানীতে থাকতেন তবে তাকে মেরে ফেলা হত। তিনি বিবিসিতে হিটলারের নাৎসীবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রচার করতে শুরু করেন।
এককালের অ-রাজনৈতিক টমাস মান লিখেছেন--
দেশ-বিদেশের ফ্যাসিস্টরা অপপ্রচার চালাবে, শ্লীলতালঙ্ঘন করবে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠ হলে নানাভাবে নিপীড়ন করবে, তবু বিপন্ন শিল্পীরা জানবেন-- যেখানের জীবনের অসম্মান হয়, সেখানের শিল্পেরও সমাধী। আর শিল্পের পক্ষে বলেই জীবনের পক্ষে দাঁড়ানো লেখক ও শিল্পীর জন্য জরুরী ও আবশ্যক।

Post a Comment

0 Comments