লেখকের ডেইলি রুটিন


 কুলদা রায়


অনেকের ধারণা লেখক মানেই আলাভোলা মানুষ। তারা কোনো নিয়ম কানুনের ধার ধারেন না। রুটিনের কোনো বালাই নেই। আবার কারো ধারণা লেখা জিনিসটা ঘোরে পাওয়া ব্যাপার। ইচ্ছে করলেই লেখা যায় না। যখন লেখা ভর করে তখন লেখক আর সাধারণ মানুষ থাকেন না। তিনি ভুতে পাওয়া মানুষের মতো দিন রাত্তির ভুলে লিখতে থাকেন। এগুলো হয়তো কোন কোনো লেখকের জন্য সত্যি। তবে সব লেখকের বেলায় নয়।

কোনো কোনো লেখকের ধারণা আছে তার লেখার জন্য বিশেষ ক্ষণ, মুড, নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। সেটা ছাড়া তার লেখা হয় না। প্রখ্যাত লেখক ই বি হোয়াইট বলেছেন, কেউ যদি লেখালেখির জন্য অনুকূল সময়, স্থান, পরিবেশ আসার পরে লিখবেন বলে বসে থাকেন,  তবে নিশ্চিত বলা যায়, জীবন ধরে তাকে বসেই থাকতে হবে-- কাগজে একটি শব্দ লেখার আগেই তার মৃত্যু হবে। আবার অনেকে দিব্যি ঘর সংসার করছেন। চাকরি করছেন। ভিড় ভাট্টাও তাঁর লেখার কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। চাকুরিজীবীরদের মতই তিনি নিয়ম মেনে লেখা জন্য দিনের একটা সময় নির্ধারণ করে নেন। এই সময়টার মধ্য থেকেই লেখার সময় বের করে নেন। লেখার জায়গাটি বেছে নেন।  মনোযোগ দিয়ে লেখেন।  কিছুটা লিখে আবার পরের দিন লিখতে বসেন। কোনো সমস্যা হয় না। তবে যে ধরনের লেখকই  হোক না কেন একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে,  তার লেখক জীবনের জন্য এক ধরনের রুটিন গড়ে নিয়েছেন। হয়তো কোনোটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। কোনোটি স্পষ্ট করে দেখা যায় না।

পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকজন লেখকের লেখক জীবনের রুটিন নিয়ে এই লেখাটি করা হল। সঙ্গে বাংলা ভাষারও কয়েকজন প্রবীণ-নবীন লেখকও তাদের ডেইলি রুটিন লিখে গল্পপাঠে পাঠিয়েছেন। 
১.
ভিকটর হুগো
----------------------------------------------------------------------
জন্ম. ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৮০২ - মৃত্যু. মে ২২, ১৮৮৫)। ছিলেন ফরাসি সাহিত্যক, রাজনীতিবিদ, এবং মানবাধিকার কর্মী। তাকে ঊনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী রোমান্টিক লেখক বলা হয়ে থাকে । তার সৃষ্টিকর্মের মধে আছে লা মিজারেবলস এবং দা হাঞ্চব্যাক অভ নটরডেম।
-----------------------------------------------------------------------
 হুগো ভোরবেলা উঠে লিখতেন। আয়নার সামনে ছোট একটা ডেস্কের সামনে দাড়িয়ে লিখতেন।
তার বাড়ির কাছাকাছি একটা দুর্গ থেকে কামান দেগে প্রত্যুষ ঘোষণা করা হত। এটা শুনে হুগো বিছানা থেকে উঠে পড়তেন। নিজ হাতে বানাতেন কফি। তারপর তার দরোজার কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন তার রক্ষিতার ভোরবেলাকার চিঠি। জুলিয়েট ড্রোয়েট নামে এই মেয়েটি খুব কাছাকাছিই থাকত। তার দ্বায়িত্ব ছিল প্রতি ভোরে হুগোকে 'প্রিয়তম ক্রাইস্ট' সম্বোধন করে চিঠি লেখা। চিঠি শেষ করে নিচে মেয়েটি সই করত জুজু নামে। এই চিঠি পড়তে পড়তে হুগো দুটো কাচা ডিম খেতেন। তারপর তার লেখার ঘরে ঢুকতেন। একটানা বেলা এগারোটা পর্যন্ত লিখতেন।
২.

কুর্ট ভনগাট 
----------------------------------------------------------------
কুর্ট ভেনগাট আমেরিকান লেখক। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস সংখ্যা ১৪টি। গল্পের বই ৩টি। ৫টি নাটক ও পাঁচটি গদ্য।  
-----------------------------------------------------------------
কুর্ট ভনগাট তার স্ত্রীকে একটি চিঠিতে ডেইলি রুটিন জানিয়েছিলেন--
ভোর ৫.৩০ টায় ঘুম থেকে ওঠেন। সকাল ৮ টা পর্যন্ত লেখালেখি করেন। তারপর ঘরেই নাস্তা সারেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত লেখালেখি করেন। লেখা শেষ করে শহরের সুইমিং পুলে গিয়ে আধ ঘণ্টা সাতার কাটেন। এ সময় তিনি নিরিবিলি থাকেন। কাউকে কাছে ভিড়তে দেন না। ১১.৪৫ টায় বাসায় ফিরে চিঠিপত্র পড়েন। দুপুরের খাবার খান। এরপর স্কুলের জন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ক্লাশ নেওয়ার জন্য তাঁকে এটা করতে হয়। ৫.৩০ টায় স্কুল থেকে ফিরে স্কচের বোতল খুলে বসেন। রাতের খাবার রান্না করেন। বইপত্র পড়েন। জ্যাজ সংগীত শোনেন। 
রাত ১০ টায় শুয়ে পড়েন। 

৩.

ই বি হোয়াইট
----------------------------------------------------------------
জন্ম জুলাই ১৮৯৯খ্রি। মৃত্যু ১ অক্টোবর ১৯৮৫ খ্রি। 
ই বি হোয়াইট আমেরিকান লেখক। প্রখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা The New Yorker magazine র কন্ট্রিবিউটার তিনি। 
তাঁর বিখ্যাত নাটক--Charlotte's WebStuart Little।
-------------------------------------------------------------------------------------
তিনি যখন লেখেন তখন তিনি কোনো গান শোনেন না। গান শুনে লেখার মতো মনোযোগ তিনি আনতে পারেন না। সাধারণভাবে তিনি লিখতে পছন্দ করেন। তার বাসার লিভিং রুম বা বসার ঘরে বহু কিছু চলতে থাকে। রান্নাঘর ও সেলারের মাঝখানে একটু জায়গা আছে। এখানে ক্লোজেট বা আলমারি আছে। আছে ফোন। বাইরে অসংখ্য গাড়ি যায়। হর্ন বাজে। কিন্তু তাতে তিনি অসুবিধা বোধ করেন না। এটাই তার উজ্জ্বল সুখকর লেখার ঘর। চারিদিকের পরিস্থিতি যতক্ষণ পর্যন্ত না কার্নিভ্যালের মত অবস্থা সৃষ্টি করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত নিরিবিলি এই ঘরে লিখতে আরাম বোধ করেন।

 হোয়াইট লিখেছেন, 'আমার পরিবারের লোকজন আমাকে লেখক বলে সামান্যতম গুরুত্ব দেয় না। তারা তাদের মতো করে হইচই করে। আমি বিরক্ত বোধ করলে বাড়ির বাইরে চলে যাই। যদি কোনো লেখক মনে করেন লেখার জন্য একটি আদর্শ জায়গা তার জন্য আসবে, তারপর তিনি লিখবেন তবে তিনি একটি অক্ষরও লিখতে পারবেন না। একজন প্রকৃত লেখক যে কোনো পরিস্থিতির মধ্যেই তার লেখার জায়গা খুঁজে নেবেন। 
৪.
আর্নেস্ট  হেমিংওয়ে
----------------------------------------------------------------
(জন্ম.  জুলাই ২১, ১৮৯৯ - মৃত্যু. জুলাই ২, ১৯৬১)। মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি সাতটি উপন্যাস, ছয়টি ছোট গল্প সংকলন এবং দুইটি নন-ফিকশন গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে আরও তিনটি উপন্যাস, চারটি ছোট গল্প সংকলন এবং তিনটি নন-ফিকশন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।

-----------------------------------------------------------------
হেমিংওয়ে লিখেছেন--যখন কোনো উপন্যাস কিংবা ছোটগল্প লিখি, সকালের প্রথম আলো ফোটার পরপরই লিখতে বসে যাই। তখন আপনাকে বিরক্ত করার জন্য কেউ থাকে না। আপনি হিমশীতল অবস্থায় লিখতে শুরু করেন, আর লিখতে লিখতে শরীর তেতে ওঠে। যা লিখেছেন তা আপনি পড়ে দেখেন, আপনি পরবর্তীকালে কী লিখছেন তা ভেবে দেখার জন্য লেখার কাজে বিরতি দিতে পারেন। লেখার নির্যাস যতক্ষণ বজায় থাকে, ততক্ষণ আপনি লিখে যেতে পারেন; আগামীকাল কোথা থেকে শুরু করবেন, তা ঠিক করে লেখার কাজ বন্ধ করতে পারেন। ধরুন, সকাল ছটায় লিখতে বসলেন। দুপুর কি তার পূর্ব পর্যন্ত লিখে যেতে পারেন। লেখা শেষ যখন করেন, তখন আপনি শূন্যতাবোধ করতে পারেন। আবার নাও পারেন। কারণ আপনি ভালোবাসা দিয়েছেন এমন একজনকে, যাকে আপনি ভালোবাসেন। কোনোকিছুই আপনাকে আহত করতে পারে না। কিছুই ঘটতে পারে না, মানে আগামীকাল আবার আপনি লেখার কাজ শুরু করার আগে কিছুই ঘটবে না। আগামীকালের জন্য প্রতীক্ষাটা খুব কষ্টকর।
৫ 
হারুকি মুরাকামি
------------------------------------------------
(জন্মঃ ১২ জানুয়ারি ১৯৪৯)। একজন
জনপ্রিয় জাপানী লেখক। তিনি ওয়ার্ল্ড ফ্যান্টাসি অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), ফ্রাংক ও'কনার আন্তর্জাতিক ছোটগল্প পুরষ্কার পেয়েছেন।  অপরদিকে তার সমস্ত শিল্পসম্ভারের জন্য ফ্রান্‌ৎস কাফকা পুরষ্কার(২০০৬) এবং জেরুজালেম পুরষ্কার (২০০৯) পেয়েছেন। তাঁর মৌলিক রচনার মধ্যে এ ওয়াইল্ড শিপ চেজ (১৯৮২), নরওয়েজিয়ান উড(১৯৮৭), দি উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকল (১৯৯৪-১৯৯৫), কাফকা অন্য দি শোর (২০০২) এবং ওয়ানকিউএইটফোর (২০০৯-২০১০) অন্যতম। 
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
হারুকি মুরাকামি যখন কোনো উপন্যাসের লেখার মুডে থাকেন তখনকার দিনগুলোতে ভোর চারটায় ঘূম থেকে উঠে পড়েন। একটানা পাঁচ ছয় ঘণ্টা লেখার কাজে মগ্ন হয়ে থাকেন। দুপুরে দশ কিলোমিটারের মতো দৌঁড়ে আসেন। অথবা পনেরো শো মিটার সাঁতার কাটেন সুইমিং পুলে। আবার কখনো দৌঁড়ানো ও সাঁতার কাটা কাজ দুটি একই দিনে করেন। তারপর কিছুটা পড়াশুনা করেন। গান শোনেন। রাত নটায় ঘুমোতে চলে যান।

কোনো উপন্যাস লেখার এই দিনগুলোতে এই রুটিনটা প্রতিদিনই অনুসরন করে চলেন। প্রতিদিনই এই একই ধরনের রুটিন অনুসরণ করাটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা একধনের সম্মোহনের মত কাজ করে। এই সম্মোহনের মধ্যে দিয়ে তিনি মনের একটি গভীর স্তরে চলে যান।
মুরাকামি মনে করেন, এই রুটিন পাঁচ ছমাসের  মত একটানা অনুসরণ করতে হলে শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে খুব বেশি শক্তিশালী থাকা দরকার। এই দিক থেকে একটানা কোনো উপন্যাস লেখার কাজটি মোটেই সহজ নয়—এই কাজে টিকে থাকার জন্য কিছুটা ট্রেনিংও দরকার আছে। কোনো শৈল্পিক কাজে শারীরিক সুস্থতা একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। 
৬.
 অমর মিত্র
------------------------------------------------------------------
জন্ম :৩০ আগস্ট, ১৯৫১। বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কাছে ধুলিহর গ্রামে | তিনি ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্রউপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন।প্রকাশিত বই : পাহাড়ের মত মানুষ, অমর মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প, অর্ধেক রাত্রি, ডানা নেই উড়ে যায়, ধুলোগ্রাম, অশ্বচরিত, আগুনের গাড়ী,ধ্রুবপুত্র, নদীবসত, কৃষ্ণগহ্বর, আসনবনি, নিস্তব্দ নগর, প্রান্তরের অন্ধকার, ভি আই পি রোড, শ্যাম মিস্ত্রী কেমন ছিলেন, গজেন ভূঁইয়ার ফেরা, জনসমুদ্র, সবুজ রঙের শহর, সমাবেশ, সারিঘর, সুবর্ণরেখা, সোনাই ছিলো নদীর নাম, হাঁসপাহাড়ি।
------------------------------------------------------------
রুটিনের সব দিন তো একরকম যায় না। প্রবল বৃষ্টি নেমেছে শেষ রাত থেকে, সেদিন আর আগের দিনের দৈনন্দিনতা এক হয় না। বাড়িতে উৎসব কিংবা শোক, আগের দিনের মতো যায় না। মন খারাপ, নিকটজন, বন্ধু ভুল বুঝে সরে গেছে, যাকে বন্ধু মনে করে এগিয়েছি, সে আচমকা কেন ফণা তুলেছে তা বুঝতেই পারলাম না। এক গুনী বন্ধুকে ত্যাগ করলাম অন্যজনের কথায়, সে অভিমানে ত্যাগ করল আমাকে, আর যারা তখন ঘনিষ্ঠতার ভান করেছিল, তারা কাজ মিটে গেলে আমার থেকে সরে গেল। দ্বন্দ্ব ছিল তাদের ভিতর আমি কেন মাথা গলালাম এক পক্ষের কথায়। মন খারাপ, অসম্মানের কথা শুনেছি নিকটজনের কাছে। আগের রাতে ভয় হলো, ইস কিছু হয়ে যাবে না তো, শরীর কাঁপছে। সরবিট্রেট আছে তো! তারপর অ্যালজোলাম-২৫ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। মন ঘুমোতে চায় না। ভেঙে যায়।

ভোর চারটেয় ভেঙে গেল সেই ঘুম। আগের রাতে আত্মজ বলেছিল, তুমি মোৎজারট শোনো বাবা, সমস্ত উদ্বেগ কেটে যাবে। মোৎজারট এই ট্যাবে ভরা নেই। আছে কম্পিউটারে। আমি ভোরবেলা বিছানায় শুয়ে হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশিতে সং অফ দি রিভার শুনছিলাম। তারপরে সুজাত হোসেনের গলায় রাগ ঝিনঝোটি। আবার হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। নদীর গান।

তখন মহালয়ার ভোর। মনে পড়ে এই ভোরে বাবা আর কাকা তখনো পুর্বপাকিস্তানে, আমার তখন আট-নয়। বাঁশি শুনতে শুনতে সব মনে পড়তে লাগল। মনে এল কত নদী আর কত চোখের জল। চৌরাসিয়ার বাঁশিতে ডিব্রুগড়ের সেই ব্যপ্ত ব্রহ্মপুত্র, ভাগলপুরের গঙ্গা, বিদিশার নীলজল বেত্রবতী, পাঁচমারির পথে রেবা নদী (নর্মদা), কপোতাক্ষ, তিস্তা, পদ্মা, যমুনা... সমস্ত নদী মুখ দেখাতে লাগল। বাঁশিওয়ালার বাঁশিতে আমার তর্পন হলো সাতপুরুষে। পিতৃকুল মাতৃকুল জল পেল এইদিনে।

ভোরে গান শোনা অভ্যাস আমার। তারপর যাই হাঁটতে। কোনো কোনোদিন হাঁটতে ইচ্ছে করে না। গান নিয়ে শুয়েই থাকি। একটু নেট খুলি মোবাইলে। তারপর আলো ফুটে বেলা হয়ে গেলে উঠে পড়ে নিজহাতে বানানো দুকাপ চা। তারপর লেখার টেবিল। লিখতে বসা। এই যে লিখছি। আমায় লেখার টেবিলই জীবন দেয়। রাতে ঘুম হয়নি ঘুমের ওষুধ খেয়েও, কিন্তু সেই ক্লান্তি লেখার টেবিলে এসে ধুয়ে যায়।

যাই হোক লেখা নিয়ে বসবই। পাঁচ ঘণ্টা। এর ভিতরে আধঘণ্টা মন দিয়ে বাজার। সবজি, মাছ, দুধ...। দশটা নাগাদ ব্রেকফাস্ট। চায়ের সঙ্গে ৫টা বিস্কুট সকালে খেয়েছি যে। লেখা থেকে উঠে ঘুম আসে। ঘুমোই আধঘন্টা—এক ঘণ্টা। তারপর স্নান, খাওয়া। দুপুরে পড়া। বিভুতিভূষণ থেকে জয়ন্ত, অরিন্দম, কুলদা, শমীকদের গল্প, গৌরী ঘোষের প্রবন্ধ, যেদিন যা মনে চায়।

বিকেলে যদি মনে হয় ট্রামে কলেজ স্ট্রিট কিংবা শ্রীমানি বাজার। আড্ডা। কফি, চা। ফেরা রাত সাড়ে আটটা নটা। পড়া। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া। আবার ব্যতিক্রমও হয়। ফেসবুক, হোয়াটস আপে কথা। ঘুম এলে ঘুম। আবার ভোর। সকাল।
লেখা যদি না আসে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত কথা সোপান পড়া। কী ছেপেছি আবার দেখি। শারদীয়া সংখ্যা পড়া। কম্পিউটারে বন্দী নতুন উপন্যাস কুমারী নদীর দেশ চাই একটু সংস্কার।

সমস্ত দিনে কত ফোন আসে। আমেরিকা থেকে কুলদা রায়, বিশ্বদীপ চক্রবর্তী কিংবা শমীক দোলনচাঁপা, ইপ্সিতা...। কিংবা দাদা। মেয়ে। ফোন এলে খুব আনন্দ। নিজেও না পারলে ফোন করি। কথা সোপানের প্রকাশক তরুণ বন্ধু জয়জিৎ সকাল নটা নাগাদ একবার ডাক দেয়ই।
এই সব নিয়েই রুটিন। রুটিন—বেরুটিন। 

৭.
শামসুজ্জামান হীরা
-----------------------------------------------------------------------
মুক্তিযোদ্ধা। গল্পকার। প্রবন্ধকার।
প্রকাশিত দুটি গল্পগ্রন্থ-- ‘দিঘির জলে পুরনো চাঁদের শব’ ও ‘কানাগলিতে কানামাছি’।সম্পাদিত বই অরুণ সোম কর্তৃক অনূদিত নিকোলাই গোগলের ‘ওভারকোট’।
---------------------------------------------------------------------
ঘুম ভাঙে নটায়, কখনও আরও দেরিতে। রাত দুটোর আগে বিছানায় যাওয়া হয়ে উঠলে তো। জেগে-থাকা সময়ের সিংহভাগ ব্যয় হয় লেখালেখিতে আর বই-সাময়িকী পড়ায়।

আমার লেখার কোনও বাঁধাধরা সময় নেই। পুরনো লেখাগুলোর বেশির-ভাগেরই জন্ম রাতের বেলা। এখন সকাল দুপুর রাত, যখন মুড আসে লিখি। আগে লেখার মুড না এলে অন্য কাজে সময় ব্যয় করতাম। এখন নিজের লেখা না বেরোলে অনুবাদে লেগে পড়ি। এভাবেই অ্যালান পো, মোপাসঁ, মার্কেজের বেশ কটা গল্প অনুবাদ করা হয়ে গেল। ছাপাও হল বিভিন্ন সাহিত্য-সাময়িকীতে। অতিসম্প্রতি লেগে আছি ন্গুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ও নিয়ে।

শহরের হৈহুল্লোড় থেকে বাঁচতে মাঝেমধ্যে চলে আসি গ্রামে। লেখালেখিও জমে এখানে ভালো। যতক্ষণ জেগে থাকি ওই এক কাজ। প্রকৃতি-প্রাকৃতজন। লেখার উপকরণ জোটে বেশ; মনোঃসংযোগও।

লেখার ক্ষেত্রে আমার নিজের একটা পদ্ধতি আছে। প্রথমে গল্পের ছক আঁকি কাগজে। তারপর কম্পিউটারে শুরু হয় লেখা। অনেক সময় দেখা যায় লেখাটা ছকের বাইরে চলে গেছে — আরও ভালো কিছু একটা হয়েছে। কখনও মাথায় জমে থাকা মালমসলা সরাসরি কম্পিউটারের বাটন হয়ে মনিটরে গল্পে রূপ নেয়। আর মজা হল, গল্পের প্লট এককেন্দ্রিক থাকে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। খণ্ডখণ্ড ঘটনার সিনথেসিসে গড়ে ওঠে একটি গল্প। সিনথেসিসের আগে ঘটনাগুলো ফারমেন্টেড হয় অনেকদিন ধরে। কিছু যে ব্যতিক্রম নেই তা নয়।

নিজের লেখা নিয়ে আমি তৃপ্ত নই একেবারেই — তবু লিখি, আনন্দ তো পাই। মন্দ কী।

ভালোই ব্যস্ত সময় পার করছি এখন। আমার নিজের একটি গল্পসংকলন ‘পিছলা ঘাট’ এবং ন্গুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ও-র ‘মার্সিডিজ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও অন্যান্য গল্প’ এই দুটো বইয়ের কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা নিয়ে এই ব্যস্ততা। থিয়োঙ্গও-র ‘A Mercedes Funeral’ আমার পড়া গল্পের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি।

হাতে কাজকম্ম, যাকে বলে সাংসারিক কাজ, নেই তেমন একটা। আয়রোজগার করেন স্ত্রী — কলেজের টিচার। আমি লেখালেখির বাইরে পার্টিকে সময় দেই — কখনও সকালে, কখনও-বা বিকেল থেকে সন্ধ্যা । বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। তাছাড়া বই পড়েও সময় কাটে। একটা সময় ছিল যখন সন্ধ্যা হলেই আড্ডা। ঢাকা শহরের, শুধু ঢাকা বলব কেন, কলকাতারও অনেক গুণীজনের সান্নিধ্য জুটত সেই আড্ডায়। এখন আড্ডার লোকেরা বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কেউ-বা প্রয়াত। সময় পাল্টে দেয় কতকিছু!

লেখার ব্যাপারে অতিমাত্রায় খুঁতখুঁতে আমি। নিজেরই হোক বা অনুবাদ। একটা লেখার চূড়ান্ত রূপ দিতে লেগে যায় বহুদিন, কখনও-বা মাসের পর মাস। আগে সপ্তাহে অন্তত একদিন লেখা নিয়ে লেখক বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতাম। ওদের মতামত শুনতাম। এখনও কোনও লেখা শেষ করে জনা তিনেক সাহিত্যবোদ্ধা বন্ধুর কাছে ইমেইলে পাঠাই, ফোনে আলাপ চলে। মাসে দুমাসে বসা হয় মুখোমুখি।

যখন স্নায়ুচাপ পড়ে বেশি, মাথা ভার হয়ে ওঠে, কিছুসময় সময় কাটিয়ে দেই গান শুনে। আর হ্যাঁ, ফেসবুকে তো ঘণ্টা খানেক কাটেই, শোবার আগে।
৮ .
পাপড়ি রহমান
-------------------------------------------------------------------
জন্ম: ১৯৬৫। গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণা কর্মের সঙ্গেও যুক্ত আছেন।
গল্পগ্রন্থ: লখিন্দরের অদৃষ্টযাত্রা, হলুদ মেয়ের সীমান্ত, অষ্টরম্ভা, ধূলিচিত্রিত দৃশ্যাবলি। উপন্যাস: পোড়ানদীর স্বপ্নপুরাণ, বয়ন, মহুয়াপাখির পালক। সম্পাদনা: ধূলিচিত্র।
-------------------------------------------------------------
  জমিদার পূর্বপুরুষের রক্ত শরীরে বইছে বলে আমি আর্লি রাইজার নই। সো রোদ্দুর বড় করে হেসে উঠলেই ঘুম ভাঙে আমার। উঠে পানি খেয়ে দিন শুরু করি। দুধ আর লাল আটার রুটি খাই নাস্তাতে। গ্রিনটি চলে দুইবেলা। রাধুনি চলে যায় ১০ টায়। ঘর ক্লিনার বুয়া যেতে যেতে ১২ টা।

তারপর থেকেই আমি মুক্ত বিহংগ! লেখার টেবিলে বসি। টানা কাজ করে দেড়টার দিকে স্নানে যাই, দুইটায় লাঞ্চ করি। ফেসবুকিং করি খবরাখবরের জন্য। কলম ও পিসি দুই মাধ্যমেই কাজ করি। দুপুরে রেস্ট নিই এক ঘন্টা। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ফোনালাপ করি আমার স্কলার বন্ধুদের সাথে। ফের লেখার টেবিলে। রাত ১২ টার পরে কবি ও গদ্যকার বন্ধুর সাথে পড়া ও লেখা নিয়ে শেয়ার করি। সে ভাল যা পড়ে আমাকে শোনায়। নিজের বা অন্যের লেখা। আমিও যাই পড়ি তার সাথে শেয়ার করি। কিন্তু নিজের লেখা পড়ে শোনাই না তাকে। কারণ আমি ভাল করেই জানি আমি কি লিখি? আমার লেখা নিয়ে কারো কোনো উপদেশ আমি শুনি না। আর ভাল বই খুজতে আজিজ বা কনকর্ডে যাই। পছন্দ হলে বই কিনি নইলে নয়। আজকাল গল্প বা উপন্যাস কিনি না। কিনি প্রবন্ধ ও ফিলসফির বই। কবিতাও কিনি প্রচুর। ক্লান্ত বা বিষণ্ণ লাগলে কবিতা পড়ি। মুক্তগদ্য লিখতে ভাল্লাগে ইদানীং।

৯. 
দীপেন ভট্টাচার্য
-----------------------------------------------------------------
জন্ম ১৯৫৯। আদি নিবাস এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল।
বিজ্ঞানী। গল্পকার। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে পিএইচডি করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইন্সটিটিউটের গবেষক ছিলেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে (ইউসিয়ার) গামা রশ্মি জ্যোতির্বিদ হিসেবে যোগ দেন। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর প্রকাশিত বই : দিতার ঘড়ি, নিওলিথ স্বপ্ন, অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমার দৈনন্দিন জীবন খুবই সাদামাটা।

আমি বিজ্ঞান পড়াই ও পড়িয়ে খুব আনন্দ পাই। পড়ানোর মধ্যে দিয়ে প্রকৃতির চালচলনের অনেক হদিশ পাই। সেই হদিশ পাবার মধ্যে অনেক আনন্দ আছে। সকালে আমাকে কিছু পড়াশোনার কাজ করতে হয় কলেজ যাবার আগে। গাড়ি যখন চালাই, কাজে যেতে বা অন্য কোথাও আমি রেডিওতে National Public Radio (NPR) শুনি, দিনের খবর, বিজ্ঞানের খবর। এই আজকেই NPRএ Radio Lab নামে একটা প্রোগ্রাম শুনছিলাম, তারা বিজ্ঞানকে এমন কৌতূহল-উদ্দীপকভাবে উপস্থাপনা করে মনে যেন সেটার মাঝে অলৌকিকত্ব আছে। আজকের প্রোগ্রামে মনটানার একটা পরিত্যক্ত উন্মুক্ত খনিতে জল ঢুকে কেমন করে একটা ধাতু ও অ্যাসিড-দূষিত হ্রদ সৃষ্টি করল সেই নিয়ে বলছিল, এই কাহিনীর একটি চমকপ্রদ পরিণতি আছে, সেটা একটা গল্পের অংশ হতে পারে। 

কাজে আমি অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলি, অনেক প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা আমার সাথে দেখা করতে আসে, তাদের কারু কারু সাথে আমার গল্প কতদূর এগোলো সেটা নিয়ে কথা বলি। অনেক সময় তারা feedback দেয়। তারা বিভিন্ন জনগোষ্ঠী থেকে আসার দরুন তাদের feedbackও ভিন্ন ভিন্ন হয়, তারা আবার আমার বই ইংরেজীতে দেখতে চায়।

আমার মাথায় যখন কোনো প্লট আসে সেটা আমার স্ত্রীকে আমি বলি যাতে নিজের মনে ব্যাপারটা গোছাতে পারি। তার কিছু পরামর্শ থাকে। আমি আবার সিনেমা ও কিছু কিছু টিভি সিরিয়ালের দর্শক। বিশেষতঃ কিছু কিছু মার্কিন টিভি সিরিয়ালের পট পরিবর্তনের স্টাইল আমাকে প্রভাবিত করেছে। সেটা থেকে আমি যে শিক্ষাটা নিয়েছি সেটা হল দর্শক বা পাঠককে তোমাকে ক্রমাগতই চ্যালেঞ্জ করে যেতে হবে, তাকে ভাবাতে হবে, একটা জিনিস যখন সে ভাববে শেষ হয়ে গেছে, তখনই নতুন জিনিস আনতে হবে। এই জিনিসটাকে আমি দেখি একটা বৈজ্ঞানিক বা গাণিতিক সমস্যা হিসেবে। সেটার সমাধানও আনন্দ আনে।

আমার লেখার মূল সময়টা রাতে রাত নটা-দশটা থেকে একটা-দেড়টা পর্যন্ত। এই সময়ে মাথায় এক গাদা চিন্তা-ভাবনা হাজির হয়। আমি একটা ম্যাকবুক প্রোতে অভ্র অক্ষরে লিখি। এই সময়ে সাধারণতঃ বাংলাদেশ থেকে টেলিফোন আসে। বিজ্ঞান সংগঠনের কিংবা ব্যক্তিগত কিংবা অন্য জরুরী কিছু।

মাঝে মধ্যে রাতে বাড়ির পেছনে দুরবীন দিয়ে আকাশ দেখি, ক্যামেরা দিয়ে আকাশের ছবি তুলি, মাঝে মধ্যে ঘন্টা দেরেক দূরে যশুয়া ন্যাশানাল পার্কে যাই সূর্যাস্তের রঙে পাথরের লাল হয়ে যাওয়া দেখতে, সেই পার্কের অন্ধকারে উজ্জ্বল আকাশে ছায়াপথ দেখতে, তার ছবি তুলতে। বাংলায় একটি সাধারণ আকাশ দেখার বই লেখা শেষ করতে চাইছি।

ছুটির দিনে আমি অনেক সময়ে পাহাড়ে হাঁটতে যাই। পাহাড় আমার খুব প্রিয়। এখনো চেষ্টা করি উঁচুতে উঠতে। বছর দশেক আগে দৌড়াতাম, হাফ-ম্যারাথন ইত্যাদি। ইদানীংকালে সেটা হয় না। ছুটির দিনে অনেক সময় স্টারবাক্সে যেয়ে লিখি। 'দিতার ঘড়ি' মোটামুটি স্টারবাক্সেই লেখা হয়েছে। একদিন, খেয়াল আছে, ঐ বইয়ের নায়ক ত.কে একটা সুরঙ্গ থেকে বার করতে পারছিলাম না। স্টারবাক্সে বসে একটা কাগজ ছক কাটছিলাম, হঠাৎ করে একটা দরজা এঁকেছিলাম, মনে হল ত. দরজাটা পাবে। দরজার ওপারে তার জন্য আরো রহস্য অপেক্ষা করবে।

নতুন বই পড়ার সময় পাচ্ছি না। ইদানীংকালে সেই তলস্তয়, কনরাড, বোরহেস। লা মিজারাব শেষ করার চেষ্টা করছি। দু-একজন বন্ধুর সঙ্গে সপ্তাহের মাঝখানে একদিন হয়তো রেস্তোরা বা বারে যাই রাজনীতি, সাহিত্য বা বিজ্ঞান নিয়ে আড্ডা দেবার জন্য। তবে বাংলাদেশের উদ্দীপনা নেই সেই আড্ডায়।

আমি বছরে দুবার বাংলাদেশে যাই, মূলতঃ বিজ্ঞান সংগঠনগুলির সাথে যোগাযোগ রাখতে, পুরোনো বন্ধুরা যাতে আমাকে না ভুলে যায় সেই জন্য এবং দেশের পরিবেশটা মনে ধারণ করে যেন রাখতে পারি সেইজন্য। দু-একটি ছাড়া সব লেখাতেই বাংলাদেশের কথা আছে। লেখার সময় আমি পাঠককে কোনো বিশেষ বাণী দিতে চাই না, মহাবিশ্বের ব্যাপারে আমার যদি কোনো দর্শন থেকে থাকে সেটা সামগ্রিকভাবে সবকটা লেখাকে মূল্যায়ণ করলে হয়তো বোঝা যেতে পারে। আমি অবশ্য নিজেকে সাহিত্যিক ভাবি না। সেটা হয়তো আমাকে একদিক থেকে মুক্ত করে দিয়েছে।

১০.
হামীম কামরুল হক
------------------------------------------------------------------
জন্ম: ২২ জানুয়ারি ১৯৭৩।প্রকাশিত গ্রন্থ- উপন্যাস: রাত্রি এখনো যৌবনে (২০০৮), গোপনীয়তার মালিকানা (২০১০)। গল্পগ্রন্থ: শূন্যপরান ও অন্যান্য গল্প (২০১৩)। নভেলা সংকলন: গোলাপের সিঁড়ি (২০১২)।
------------------------------------------------------------------
আমার লেখার এখন কোনো রুটিন নেই। আসলেই নেই। অনেক চেষ্টা করে দেখেছি। পারিনি তৈরি করতে। তবে রাত জেগে লিখি না-- এটা বলতে পারি। তাছাড়া ভোরে, সকালে, সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে থেকে গোসল সেরে নাস্তা করে ফের লিখতে বসে এক টানা দুপুর পর্যন্ত লিখে, দুপুরের খাবার খেয়ে আবার লেখা চলেছে। কখনো সেটা চলেছে একেবারে রাত অব্দি। মানে রাতে খাওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপর রাত খুব বেশি হলে বারোটা পর্যন্ত জেগে সেরে নিয়েছি সেদিনের লেখার কাজ।-- তবে এটা প্রতিদিনের রুটিন নয়। শুক্র ও শনিবার বা কোনো ছুটির দিন হলে আমি এমনটা লিখতে পারি, তাও সব শুক্র-শনিতে নয়। যদি লেখার কোনো চাপ থাকে, একটা নির্দিষ্ট দিনে কোনো লেখা পাঠানোর কথা কাউকে দিয়ে থাকি, তবেই এমন নাওয়া-খাওয়া ছাড়া সারাদিন লেখা নিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মানে, এটা আমি সব সময় পারি না।

একসময়ে প্রবল ইচ্ছা কাজ করতো-- প্রতিদিন লিখতে বসবো। বসবোই। আর সেটা বসতামও। তাও একেবারে ভোর চারটায় উঠে। ঘড়িতে অ্যালার্ম দেওয়া থাকতো। পাশে বউ ঘুমাচ্ছে। অ্যালার্ম বাজতে শুরু করা মাত্র তড়াক করে উঠে পড়তাম। তারপর মাত্র দশ কি পনোরো মিনিটের ভেতরে প্রক্ষালণ পর্ব সেরে নিতাম। এর জন্য তখন লেখার একটা টেবিলও বানিয়েছিলাম, যার ওপরের কাঠটা, মানে যেখানে কাগজ-কলমে লিখবো, সে জায়গাটা ‘বাইশ বাই বাইশ’ ইঞ্চির। ওই টেবিলটা একেবারে ফাঁকা রাখবো-- এই পরিকল্পনাও ছিল। কারণ আমার বাসার এক ডাইনিং টেবিল ছাড়া সব টেবিলের প্রতিটি ইঞ্চি বই দিয়ে ঠাসা। একটার পিঠে একটা বই রেখে প্রায় ছাদ ছুঁই ছুঁই বই। লোকজন এখনো বলে, আমাকে বই দিয়েই কবর দেওয়া হবে। -- এটা বলছি,কারণ আমার সেই লেখার বাইশ বাই বাইশ ইঞ্চির টেবিলটা পুরো এখন বইয়ের ঠাসা। কারণ বউ আমাকে কম্পিউটার ধরিয়েছে। কিন্তু আমি বার বার ফিরতে চেয়েছি কাগজে কলমে।

আমি যখন ভোরে লিখতাম তখন দেখা যেতো সকাল সাতটার ভেতরেই আমার লেখার বড় অংশ শেষ হয়ে গেছে। বলতে গেলে সারাটা দিন আমার সামনে ফাঁকা হয়ে যেতো। কিন্তু এতে একটা মুশকিল হতো, তা হলো: রাত নয়টার পর আমি আর দাঁড়াতে পারতাম না, চাইতামও না দাঁড়তে। রাত আটটার দিকে খেয়ে, বেশি হলে সোয়া কি সাড়ে নয়টার ভেতরে, ঘুমিয়ে পড়তাম। বলাবাহুল্য, তখন পত্রিকার অফিসে কাজ করতাম। বেলা বারোটা থেকে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত কাজ। কেবল নিজের বিভাগের পাতা বের করার দিন একটু রাতে থাকতে হতো। বা ঈদসংখ্যা বা বিশেষ সংখ্যা বের করার সময়। ওই সবই আমি আমার মতো সামাল দিতাম।

এভাবে চলছিল। একদিন ‘দ্যা ডেইলি স্টার’ থেকে ফোন করে আমার একটা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর জন্য আমার সঙ্গে আগেই অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করা ছিল। আগে থাকতেই আলাপকারী বলে রেখেছিলেন যে, আমার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিনি একটা আর্টিকেল লিখবেন। তিনি প্রশ্ন করবেন এবং আমার উত্তরগুলি তিনি রেকর্ড করবেন এবং ওই রেকর্ড পরে শুনে তৈরি হবে তাঁর লেখাটি। নির্দিষ্ট দিন আলাপ শুরু হলো। এক প্রশ্নে জবাবে, মানে, আমি কখন লিখতে বসি-- এর উত্তরে সত্য কথাটা বললাম। বলি, ভোর চারটায় উঠে লেখার কাজটা শুরু হয়। কেন? কারণ অফিসের কাজে বন্দি হওয়ার আগেই আমি আমার লেখা ও পড়ার বড় অংশটা সেরে ফেলতে চাই। সেই সাক্ষাৎকার থেকে তৈরি লেখাটি এখনও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। গুগলে আমার নাম ইংরেজি বানানে লিখে সার্চ দিলে ইংরেজিতে এই--‘২১ অ্যানিভার্সারি সাপ্লিমেন্ট--দ্যা ডেইলি স্টার’ লিংকে ক্লিক করলে সেটা পাওয়া যায়। ওই আর্টিকেলে আমার ভোরে লিখতে ওঠার ব্যাপারটা ফাঁস হাওয়া পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে আমার ভোরে ওঠা বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। অবশ্য এর আরেকটা কারণও আছে। আমি পত্রিকার কাজ থেকে বাংলা একাডেমিতে কাজ শুরু করি। নয়টা-পাঁচটা অফিস। আগে যেখানে একদিন বন্ধ ছিল সেখানে দুদিন বন্ধ। তাই আমার সারা সপ্তাহে লক্ষ্য থাকে ওই দুটো দিনই আমি আমার লেখার জন্য কাজে লাগাবো। তারপরও প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখার জন্য এখানও সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে লেখার টেবিলে বসার চেষ্টা করি। প্রায়শই হয় না। তবে হাল ছাড়ি না। সুযোগ পেলেই প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখবো-- এই ইচ্ছাটা থাকে। হেমিংওয়ের একটা কথা আছে,‘দিন হলো দেবার জন্য, রাত হলো নেবার জন্য।’ এটাও খুব মানতাম। এখন এতে কাজ হয় না। দিনে বরং নানান কাজের ফাঁকে পড়া হয়, সন্ধ্যা থেকে রাত নয়টা দশটার মধ্যে লেখার কাজটা হয়।

নানান সময়ে নানান রুটিন করে দেখেছি। কাজ হয়নি। তা-ই লেখার চাপ থাকলে রাত জেগে লেখা ছাড়া ছুটির দিনের যেকোনো সময়ে আমি সেটা চালিয়ে নিই।

হায়! লেখার অর্ধেকটা হলো লিখতে বসা।-- এই সংস্কারটা ভেতরে ভেতরে কাজ করে। কিন্তু রুটিন তো আজো তৈরি হলো না। হয়তো শরীরে-মনে-আত্মায়-সত্তায়-অস্থি-মজ্জায় এখানে লেখাটাকে প্রধান ও প্রকট করে তুলতে পারিনি। আর কবে-যে পারবো, জানি না। যদি পারি, তাহলে হয়তো একটা রুটিন তৈরি হতে পারে। তখন লেখার রুটিন নিয়ে আরেকটা লেখা হয়তো লিখতেও পারি।



১১.
স্বকৃত নোমান
-------------------------------------------------------------
সাংবাদিক, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। জন্ম ১৯৮০ সালের ৮ নভেম্বর―ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়ায়।‘রাজনটী’ উপন্যাসের জন্য ২০১২ সালে এইচএসবিসি-কালি ও কলম কথাসাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন স্বকৃত নোমান।
-------------------------------------------------------------
প্রতিদিন সকাল নয়টায় ঘুম থেকে জেগে কম্পিউটার অন করে রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে স্নান ও নাস্তা এবং দৈনিক পত্রিকা পড়ি। মোট এক ঘণ্টা। দশটায় বাসা থেকে বেরিয়ে এগারটার মধ্যে অফিসে পৌঁছি। পথে এই এক ঘণ্টা বাসে বসে বই পড়ি। এগারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অফিস। অফিসে কাজের চাপ কম থাকলে সঙ্গে নেয়া বইটা পড়ি। সাতটার মধ্যে আবার বাসায় ফেরা। বাসায় ফেরার পথে এক-দেড় ঘণ্টা বাসে আবার বই পড়ি। কখনো বাসে সিট না পেলে মোবাইলে গান শুনি। বাসায় ফিরে এক ঘণ্টা বিশ্রাম। আনুমানিক আটটার মধ্যে লিখতে বা পড়তে বসে যাই। এগারটায় রাতের খাবার। তারপর আবার লিখতে বসা। দেড়টা পর্যন্ত টানা লেখা। দেড়টায় ঘুম।

সপ্তাহে একদিন, বৃহস্পতিবার, শাহবাগ আজিজ মার্কেট কিংবা কনকর্ডে আড্ডা দিতে যাই লেখক বন্ধুদের সঙ্গে। রাত দশটা পর্যন্ত চলে আড্ডা। এগারটা নাগাদ বাসায় ফিরে সাড়ে এগারটার মধ্যে আবার লিখতে বসা। দেড়টা পর্যন্ত লিখি।

সপ্তাহের শনিবার সকাল থেকে বেলা দুটা পর্যন্ত লেখা ও পড়া। লাঞ্চ সেরে ঘণ্টাখানেকের বিশ্রাম। তারপর সপরিবার হাঁটতে বের হই। সন্ধ্যায় আবার লিখতে বসি। টানা দেড়টা পর্যন্ত লিখি বা পড়ি।

প্রতি ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে পাঁচ ছয় দিন বাসায় একা একা লিখি এবং পড়ি।
১২.
নীহারুল ইসলাম 
--------------------------------------------------------------
গল্পকার। ঔপন্যাসিক। 
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে। ‘ট্যাকের মাঠে মাধবী অপেরা’ গল্পগ্রন্থটির জন্য ২০১০ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত “সোমেন চন্দ স্মারক পুরস্কার” পেয়েছেন। গ্রন্থ : পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)। দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২)।
--------------------------------------------------------------
আমার দিন-রাতের রোজনামচা
ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ঘুম ভাঙে আমার। ঘুম ভাঙলে আড়িমুড়ি ভাঙতে বিছানায় আর পড়ে থাকি না। সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছাড়ি। প্রাতকৃত্য-স্নান সারতে সকাল ছটা বাজে। একমুঠ মুড়ি সহযোগে চা পানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দিনযাপন। আগে সংবাদপত্র পড়তাম, এখন পড়ি না। তার বদলে নিজের পড়াশুনা নিয়ে কাটে সকাল দশটা পর্যন্ত। মধ্যে আধ ঘণ্টা বরাদ্দ থাকে বাজার করার জন্যে।

সকাল দশটায় রুটি খেয়ে স্কুল রওনা হই। বাড়ি থেকে আমার স্কুল মাত্র পনেরো মিনিটের পথ। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসি সাড়ে তিনটে, চারটে নাগাদ। ভাত খেয়ে ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম। তারপর বিকেল পাঁচটায় চলে যাই আমার লেখার ঘরে। বাড়ি থেকে মাত্র দু-আড়াই শো মিটার দূরে সেটা। সেখানে রাত ন’টা পর্যন্ত আমার লেখালেখির চেষ্টা। সঙ্গে উচ্চাঙ্গ সংগীত শ্রবণ। লিখতে ইচ্ছা না করলে পড়াশুনা করি। রাত ন’টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা।

সাড়ে দশটায় বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খাওয়া। তারপর পরিবারের সঙ্গে একটু সময় কাটানো। সঙ্গে টিভি দেখা। মূলত খবর দেখি। রাত বারোটায় আবার বিছানায়।

নিত্যকার রুটিন এরকম হলেও মাসে অন্তত একটা মুভি দেখি। না, প্রেক্ষাগৃহে নয়, সেটা আমার লেখার ঘরে বসে পিসিতেই। বছরে গোটা পাঁচ-সাতেক থিয়েটার। এর জন্যে আমাকে কষ্ট করে বহরমপুর কিংবা কলকাতা যেতে হয়। গড়-পড়তা বছরে একবার পরিবার নিয়ে দেশ দেখে বেড়ানোর ব্যাপারটাও থাকে।

টেলিফোনে কথা খুব প্রয়োজন না পড়লে কখনোই নয়। তবে অনলাইন থাকি দিনের অনেকটা সময়। সেটা পড়াশুনার খাতিরেই। মাঝে মধ্যেই ফেস্‌বুকে ঢুঁ মারি। কে কী বলছে, কে কী করছে, জানবার কৌতুহল থাকে। নিজের ব্যাপারেও কিছু বলতে ইচ্ছে হয়, বলি। অবশ্যই বিতর্ক এড়িয়ে। তাও যে কখনও কখনও বিতর্কে জড়াই না, তা নয়। তখন খুব খারাপ লাগে। তবে চ্যাট একেবারে ভালো লাগে না। আমার কাছে ওটা ভাব আদানপ্রদানের একটা বিরক্তিকর মাধ্যম।

আর লেখালেখির ব্যাপারটা যেন আমার সবসময়ের কাজ। ভোরে বিছানা ছাড়ার সঙ্গে সেটার শুরু হয়। শেষ হয় বিছানায় আবার ঘুমোতে যাবার আগে পর্যন্ত। ভুল বললাম, আমি হয়ত ঘুমিয়েও লিখি! লেখা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কিংবা আমিই লেখাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াই। একটা-দু’টো লেখা কখনও আমাকে ধরে ফেলে, একটা-দু’টো লেখাকে আমি কখনও ধরে ফেলি। যদিও বেশিরভাগ লেখা মগজ থেকে কোথায় যে হারিয়ে যায়, আর খুঁজে পাই না।

সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাগুলির খোঁজে আমার দিন-রাতের অনেকটা সময় নষ্ট হয়। এই ভাবেই একটু একটু করে আমিও নষ্ট হই এই পৃথিবীর আলো-অন্ধকারে।       


১৩.
হেনরি মিলারের ডেইলি রুটিন
------------------------------------------------------------------
জন্ম. ডিসেম্বর ২৬, ১৮৯১--মৃত্যু.  জুন ৭, ১৯৮০।
হেনরি ভ্যালেনটাইন মিলার আমেরিকান লেখক। তিনি প্রচলিত লেখার আঙ্গিককে ভেঙে দিয়ে এক ধরনের আধা-আত্মজৈবনিক উপন্যাস লেখা চালু করেছিলেন। বিখ্যাত গ্রন্থ : Tropic of CancerBlack SpringTropic of CapricornThe Colossus of MaroussiThe Rosy Crucifixion।

------------------------------------------------------------
হেনরি মিলার ঠিক নিজের রুটিন নিয়ে লেখেননি। তবে সৃজনশীল লেখকদের জন্য একটি রুটিন থাকা দরকার বলে মনে করেন। এবং তিনি লেখকদের লেখালেখির জন্য রুটিন মাফিক কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। 
-------------------------------------------------------------------------------------------------
১. যে লেখাটি তিনি লিখছেন সেটা একটানা লিখে যাবেন। সেটা শেষ না করে অন্য লেখায় হাত দেবেন না।
২. নার্ভাস হওয়া যাবে না। ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করুন। ঈর্ষণীয়ভাবে, ক্লান্তিহীনভাবে লিখে যেতে হবে যখন হাতে লেখা আসবে।
৩. কর্মসুচী অনুযায়ী কাজ করুন। মুড অনুযায়ী কাজ করবেন না। আপয়েন্টমেন্টের টাইমে কাজ থামিয়ে দিন।
৪. যখন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না তখনো কাজের কথাই ভাবুন।
৫. প্রতিদিন একটু একটু করে লিখুন। একবারে সব লিখবেন বলে অপেক্ষা করার দরকার নেই।
৬. মানবিক থাকুন। মানুষ দেখুন। বিভিন্ন জায়গায় যান। যদি ইচ্ছে হয় পান করুন।
৭. শুকনো ঘোড়া হয়ে লাভ নেই। কাজ করুন আনন্দের সংগে।
৮. যখন মন থেকে ইচ্ছে করছে না তখন সেটা লেখা থামিয়ে দিন। পরদিন আবার লেখাটিতে ফিরে আসুন। মনোযোগ আনুন।
৯. যে বইটি লিখতে চাইছেন সেটা নিয়ে ভাবনা পরে করুন। আগে হাতের লেখাটি শেষ করুন।
১০. একজন লেখকের জন্য লেখাটাই মুখ্য। এরপর অন্য কিছু। চিত্রকলা, সিনেমা, গান, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গ পরে পেতে পারবেন। সবার আগে লেখা। সব সময়ই লেখা হবে লেখকের প্রথম কাজ।

Post a Comment

0 Comments