কুলদা রায়ের কবিতা : নার্সপার্ক

 


নার্সপার্ক

নার্সের সঙ্গে দেখা হলে হেসে ফেলে নার্স
বলে, আজ তুমি ভাল আছো।
আজ তুমি ভালোবাসো

 

তার দীর্ঘ ধবল পা, আর তারা জ্বলা চোখ
নার্স বলে, আজ শীত নেই, চারিদিকে সামার
জমে থাকা বরফ কুচির উপর তাই রোদ পড়ে
থেমে থেমে বৃষ্টি নামে, দাঁতগুলো ফুলের কোরক-
ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে, মনে পড়ে

 

হাসপাতালে নার্সের হাত ছুয়েঁ বসে থাকি
দরোজায় পর্দা নেই, হুড়কো তুলে দেয়া
বলি, বলো নার্স- সেইসব পরীদের গল্প বলো
বলো, সন্ধ্যেটা রাত্রির সুঘ্রাণ পরীর মতো-
স্ট্রবেরি আসইসক্রিম খেতে খেতে ঢুলতে থাকুক
বলুক সেও কোনো নির্ঘুম নার্সের কথা

 

ছোট্ট ঘরের মধ্যে পরীদের ছবি- মগ্ন জলের পরে
হাসি হাসি মুখ, এর মাঝে-

 

নার্সের কতো কাজ- জ্বর দেখা দেখা, রক্তচাপ মাপা,
ওজোনের বাড়াকমা- এরকম নার্সের ছুটোছুটি
গ্লুকোমিটারের সুতীক্ষ্ণ পিন নারোম মাংসের
ভেতরে ঢুকে পড়ে, নার্স ফিস ফিস করে-
তার কথা মনে করো- তার কথা ভেবে চলো

 

কার কথা মনে করি? কার কথা ভেবে চলি?
সূচীবিদ্ধ বেদনার কথা?
রক্তের নীরব দীর্ঘ ধারার কথা?

 

চেয়ে দেখি, দুপা ভাজ করে বসে আছে নার্স
পায়ের বিম্বিত ছায়া থেকে-
সন্ধ্যা রাত্রিকে বোন বলে ডেকে ওঠে
বলে, বৃষ্টি নামার আগে আয় বোন দুজনে পালাই

 

মাউস টিপে টিপে হেলথ ডাটা
আপডেট করে শুধু নার্স, স্থির তার চোখ
তারাগুলো নিভে আছে, বৃষ্টি ঝরার আগে
থমথমে হাওয়া

 

কতো ঘুম জানে এই সাদা নার্সের চোখ

 

এইসব দেখে শুনে ঘেমে ওঠার আগে
আমি ফিরে যাই, একটু একটু করে পা ফেলি
নতুন করে হাটিঁ-
নার্সের ধবল পায়ের কথা মনে করি
পদ্ম কোরকের মতো ছোট ছোট দাঁতগুলি
আর রক্তজমা লাল ঠোঁট ভেবে ভেবে
রাস্তা পার হয়ে যাই, ঠিক ঠিক গাড়িগুলো
নিরাপদে চলে যায়

 

আর আমাকে পথ দেখিয়ে চলে শত শত ঘুমন্ত নার্স
সাদা জামার ভেতর থেকে -
শত শত গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দীর্ঘ প্রান্তর জুড়ে
তাদের পায়ে নেই জুতো, নেই কোনো শীত মোজা
সামারে জেগে ওঠা কংক্রিট ফুড়েঁ ধবল শিকড় শুধু
ঢুকে পড়ে বহুস্তর মাটির গভীরে

 

আমি দেখি নার্স হেসে ওঠার আগে
বৃষ্টি থমকে যায়
পার্কে বৃষ্টি থেমে গেলে গাছগুলো কেঁদে ওঠে

Post a Comment

0 Comments