হারুকি মুরাকামির গল্প : নারীবিহীন পুরুষ



ভাষান্তর : কুলদা রায়

ফোনটা এলো ঠিক রাত দুপুরে-- একটায়। আমাকে জাগিয়ে দিল। মাঝরাতের ফোনের শব্দ সব সময়ই বিশ্রীরকমের কর্কশ। যেন কোনো দানবাকৃতির লোহার যন্ত্র এই পৃথিবীকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চলেছে। মানব সম্প্রদায়ের একজন হিসেবে আমার দ্বায়িত্ব একে থামানো। এই হেতু বিছানা থেকে উঠে পড়লাম। পা ঘষটে ঘষটে বসার ঘরে গেলাম। ফোনটা তুললাম।

একজন মানুষ অতি মৃদু গলায় আমাকে জানালো, এই পৃথিবী থেকে একজন নারী চিরকালের জন্য নাই হয়ে গেছে। গলাটি সেই নারীর স্বামী বলেই মনে হলো। যতদূর স্মরণ করতে পারি লোকটি বলেছিল, গত বুধবার আমার বউ আত্মহত্যা করেছে। যাই হোক না কেনো মনে হলো আপনাকে খবরটি দেওয়া দরকার। যতোটা বুঝলাম-- লোকটির গলায় এক ফোঁটা আবেগ নেই। যেন কোনো টেলিগ্রাম পড়ে শোনাচ্ছে সে। এক শ্বাসে পড়ছে। দাড়িকমা নেই। এক শব্দ থেকে আরেক শব্দে যেতে খুব কমই থামছে। ঠিক ঘোষকের মতো শুদ্ধ। সাধারণ। সাদামাটা বাস্তব। এক সময় থেমে গেল।

এর উত্তরে আমি কী বলেছিলাম? আমাকে অবশ্যই কিছু বলতে হয়েছিল। কিন্তু কী বলেছিলাম তা মনে করতে পারছি না। এরপর দীর্ঘ একটা নীরবতা নেমে এলো। রাস্তার মাঝখানে যেমন একটি বড়ো গর্ত হলে যেরকম হয় আর কি। ঠিক সেরকম করে বিপরীত দিক থেকে দুজন দুজনের দিকে চেয়ে রইলাম। তারপর, কোনো শব্দ না করে একটি ভঙ্গুর ছবি যেভাবে মেঝের উপর খুব শান্তভাবে রাখা হয়, ঠিক সেভাবে লোকটি চুপ হয়ে গেল। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অকারণে ফোন ধরে রইলাম।

সে কিভাবে আমার এতো খবর জানল? আমার কোনো ধারণা নেই। সে কি আমার নামটি তার পুরনো বয়ফ্রেন্ড হিসেবে বলে গেছে তার স্বামীর কাছে? এই লোকটি আমার ফোন নম্বর পেল কী করে? আমার ফোন নং তার কাছে থাকার কথা নয়। আর খবরটি দেওয়ার জন্য প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আমাকেই বা কেনো নির্বাচন করল? কেনো তার স্বামী তার স্ত্রীর মৃত্যুর খবরটি কষ্ট করে আমাকে জানাতে গেল? আমাকে খবরটা দেওয়ার অনুরোধটা কিভাবে তার স্বামীকে সুইসাইড নোটে লিখে গেল তা আমি কল্পনা করতে পারছি না। বহু বছর আগে আমাদের সম্পর্ক চুকেবুকে গেছে। এরপর আর কখনোই একবারের জন্য হলেও আমাদের দেখা সাক্ষাৎ ঘটেনি। এমনকি কখনো ফোনেও কথা হয়নি।

এখানে বা ওখানে-- কোনোখানেই নয়। লোকটি কোনো ব্যাখ্যায়ই দেয়নি। এটাকেই সবচেয়ে বড়ো ঝামেলা মনে হলো। তার দরকার মনে হয়েছে বলে স্ত্রীর আত্মহত্যার খবরটি আমাকে জানিয়েছে। এবং কোনো না কোনোভাবে আমার ফোন নম্বরটিও পেয়েছে। এর বাইরে আর কিছু ভাবা যায় না। তার উদ্দেশ্য হলো জানা ও অজানার মতো কোনো দোদুল্যমান জায়গায় আমাকে আটকে দেওয়া। কিন্তু কেনো? কোনো কিছু সম্পর্কে আমাকে ভাবনায় ফেলে দিতে চাইছে সে?

কী রকম?

আমি কোনো দিশা পাচ্ছি না। কোনো নোটবইয়ের একটি পৃষ্ঠায় শিশুরা যেমন করে রাবার স্ট্যাম্পের অসংখ্য সিল মারে ঠিক সেরকম করে অসংখ্য প্রশ্ন বেড়ে যাচ্ছে।

সুতরাং সে কেনো আত্মহত্যা করল আমার জানা নেই। কীভাবে আত্মহত্যা করল সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। এমনকি এই বিষয়ে যদি অনুসন্ধান করতে চাই তাও করার কোনো পথ নেই। সে কোথায় থাকত তা আমার অজানা। সত্যি বলতে কি সে যে বিয়ে করেছে সে খবরও ছিল আমার অজানা। সুতরাং তার বিয়ের পরে তার নামটি পালটে কী হয়েছিল তা ছিল আমার জানার বাইরে। এবং যে লোকটি মৃত্যু সংবাদটি দিল সেও সেরকম কোনো নাম বলেনি। তারা কত বছর বিয়ে করেছে? তাদের কি কোন সন্তান বা সন্তানরা আছে?

এই সময়ে তার স্বামী আমাকে যা জানিয়েছে তা আমি মেনে নিয়েছি। সে বিষয়ে কোনো রকম সন্দেহের ভাব আমার মধ্যে জাগেনি। আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে সে তার নিজের জগতে মগ্ন ছিল। এ সময়ে কারো প্রেমেও সে পড়তে পারে, বিয়ে করতে পারে--এবং গত বুধবারে যে কোনো কারণেই হোক না কেনো-- যে কোনো পদ্ধতিতেই হোক না কেনো সে নিজের জীবনের ইতি টেনে ফেলেছে। লোকটির গলায় মন কিছু ছিল যা মৃত্যুটির জগতের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ ঘটে বলে মনে হয়। রাত দুপুরের নিস্তব্ধতার মধ্যে আমি তার সংযোগটি শুনতে পারি--তার এক আঁটোসাটো সূত্র ধরতে পারি। তাই দুপুর রাত গড়িয়ে ভোরের দিকে কিছু উদ্দেশ্য থাক বা না থাক তার ফোন করাটি ছিল জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। যদি দিন দুপুরের একটার পরে ফোন করে জানাত, তবে এটা আমাকে কোনো ভাবনায় ফেলে দিত না।

এর মধ্যে আমি ফোনটি রেখে দেই। বিছানায় ফিরে আসি। তখন আমার স্ত্রী জেগে ওঠে।

‘কিসের ফোন ছিল ওটা? কেউ কি মারা গেছে?’ আমার স্ত্রী সুধালো।

‘কেউ মরেনি। ওটা রঙ নম্বর’। তাকে উত্তর দিলাম। আমার গলার স্বর ছিল জড়ানো। ঘুমের আবেশ মাখা।

আমার নিজের গলাটিকে মৃত্যু শোকাতুরাদের মতো ক্যানক্যানে শোনাবে সেজন্য আমার স্ত্রী এই ফোনটিকে কেনেনি। সদ্য মানুষের মৃত্যুর খবর অন্যদের হতবুদ্ধি করে ফেলে। এবং এটা অন্যদেরকেও প্রবলভাবে আক্রান্ত করে ফেলে। এটা ফোনের মধ্যে দিয়ে এসে এমনভাবে যা দুর্বল করে ফেলে--মূর্ছা ঘটায়। শব্দগুলোর ধ্বনিকে বদলে দেয়। জগৎকে তার নিজের কাঁপুনির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। আমার স্ত্রী আর কিছু বলল না। অন্ধকারের মধ্যে আমরা দুজনেই শুয়ে রইলাম। খুব সতর্কতার সঙ্গে নিস্তব্ধতাকে শুনতে লাগলাম। দুজনে দুজনের নিজের নিজের চিন্তার মধ্যে ডুবে গেলাম।

এই নারীটি হলো তৃতীয় জন। এদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। এবং এরা আত্মহত্যা করেছিল। যদি এ বিষয়ে ভেবে দেখো এবং সত্যি বলতে কি ভাবার দরকারও নেই-- এটা স্পষ্ট যে, মৃত্যুর হারের দিক থেকে এটা খুব বেশিই মনে হয়। এটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। জীবনে খুব বেশি নারীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়নি। এই নারীরা ছিল খুবই যৌবনবতী। কিন্তু কেনো তারা আত্মহত্যা করল, অথবা কেনো তারা নিজেকে মেরে ফেলতে বাধ্য হলো-- তা আমার ভাবনার বাইরে। আশা করি এটা আমার কারণে ঘটেনি অথবা অন্য কোনো প্রকারেও আমি এই মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত নই।আমি আশা করছি--তারা তাদের মৃত্যুর সাক্ষীদাতা হিসেবে আমাকে ধরে নেয়নি। কিভাবে আমি এই ঘটনাকে ব্যাখ্যা করব? এই নারীটির আত্মহত্যা করার মতো স্বভাবই ছিল না। এখানে তার নাম উল্লেখ করব না। সেটা করলে কিছু ঝামেলা হতে পারে। সেজন্য তাকে ‘ম' নামে এখানে ডাকা হবে। এর বাইরে সে খুব শক্ত সামর্থ্য মেয়ে। পৃথিবীর আপদ বিপদ থেকেও সে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম। এ ব্যাপারে সে সদা সতর্ক থাকত।

‘ম' কেমন ধরনের মেয়ে মানুষ ছিল, তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, এক সঙ্গে আমাদের কী রকম দিন কেটেছিল-- এসব বিষয়ে আমি কোনো তথ্য দিতে পারব না। যদি সত্য প্রকাশ হয়ে আসে, তবে জীবিতদের জন্য সে সত্য যথেষ্ট ঝামেলা দিতে পারে। সুতরাং আমি যা এখন লিখতে পারি, তা হলো-- বহুকাল আগে সে আর আমি ঘনিষ্ট হয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমাদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়।

‘ম' এর সঙ্গে যখন আমার প্রথম দেখা হয়েছিল তখন তার বয়েস ছিল মাত্র চৌদ্দ। আসলে সেই কিশোরী ‘ম'কে নিয়েই ভাবতে আমার ভালো লাগে। সে সময়ে ঠিক ঠিক সে রকম কিছু ঘটেনি। কিন্তু এইখানে, এই সময়ে, কমপক্ষে সেটা ঘটেছিল কল্পনা করতে ভালো লাগে। আমরা জুনিয়র হাই স্কুলে পড়তাম। সেই সময়ে আমার দেখা হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ে সেটা ছিল জীববিজ্ঞান ক্লাশ। সমুদ্রের ঝিনুক আর বিরল প্রজাতির কিছু মাছ নিয়ে পড়ানো হচ্ছিল। আমার পরেই সে বসেছিল। ‘আমার দাগ মোছার রাবার আনতে ভুলে গেছি’, আমি তাকে বলেছিলাম, ‘যদি তোমার বাড়তি রাবার থাকে তাইলে আমাকে ধার দিতে পারো?

সে তার রাবারটি নিয়ে ভেঙ্গে দু টুকরো করল। এক টুকরো আমাকে দিল। এবং বেশ মিষ্টি করে হাসল।

আর চোখের পলকে তার প্রেমে পড়ে গেলাম। সেই ছিল আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে--এর আগে এরকম কাউকে দেখিনি। নিদেনপক্ষে বলা যায়, সে সময়ে আমার সেরকমই মনে হয়েছিল। এজন্যই জুনিয়র হাই স্কুলের ক্লাশরুমে প্রথম দিন যেভাবে দেখেছিলাম সেভাবেই এখনো তাকে আমি দেখতে ইচ্ছে করি। সমুদ্র ঝিনুক আর মাছ জাদুর মতো আমাদের দুজনকে এক জায়গায় এনে দিয়েছিল। এইভাবে চিন্তা করলে ব্যাপারটি অনেক সহজ হয়ে যায়।

চৌদ্দ বছরের এক তরুণ বালক ছিলাম আমি। সে কারণে একটা উষ্ণ পশ্চিমা হাওয়া যেন আমার লিঙ্গের উপর দিয়ে শিরশিরিয়ে বয়ে গিয়েছিল। এরকমই হওয়ার কাল ছিল সেটা। এটা এমন নয় যে তার কারণে আমার লিঙ্গ খাড়া হয়ে গিয়েছিল। সে পশ্চিমা বাতাসকেও ছাড়িয়ে গেল। শুধু পশ্চিমা বাতাসকেই নয়। সে ছিল এমনই অসামান্য সুন্দরী যে চারদিক থেকে ধেয়ে আসা বাতাসকে সে একেবারে গায়েব করে দিয়েছিল। এ ধরনের লাবণ্যময় মেয়ের মুখশ্রী দেখে এই আমি কী করে তাকে ম্লান কঠিন মুখ হিসেবে ভেবে নেবো? আমার জীবনে এটা ছিল প্রথম ঘটনা। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমি একটি মেয়ের দেখা পেয়েছিলাম। মেয়েটি আমার ভেতরে এরকম ভাবনা তৈরি করে দিয়েছিল।

এটা জানার আগে ‘ম' চলে গিয়েছিল। সে কোথায় গিয়েছিল সে বিষয়ে আমার ধারণা নেই। একদিন, আমি তাকে হারিয়ে ফেলি। এক পলকের মধ্যে সেদিন ঘটনাটি ঘটেছিল। আমি যখন পিছন ফিরি, তক্ষুণি সে হাওয়া হয়ে যায়। এক মিনিট পরেই পরের ঘটনা ঘটে। কোনো এক দক্ষ নাবিক তাকে ফ্রান্সের নারসেইলেস পোর্ট অথৈ বা আইভোরি কোস্টে নেওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই দাওয়াত দিয়ে থাকবে। যে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তারা চলে গিয়েছিল তার চেয়েও বেশি গভীর হয়েছিল আমার বেদনা। যে সাগরে প্রকাণ্ড শুশুক আর সাগর ড্রাগনগুলো সাতরে বেড়ায় তার চেয়েও গভীর হয়েছিল আমার বিষাদ। আমি নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম। কোনো কিছুকেই আর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই ভয়ানক ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছিল? আমি ‘ম'কে কী গভীর করেই নাা ভালো বেসেছিলাম, কী আপনই না ছিল সে আমার। তাকে আমার কী প্রয়োজনই না ছিল। কেনো সে আমার দৃষ্টির বাইরে চলে গেল?

তবুও তখন থেকেই কিন্তু ‘ম' কিন্তু সর্বত্র রয়েছে। যেখানে যাই না কেনো সেখানেই তাকে দেখতে পাই। সে সব জায়গা, সময় ও বহু মানুষের অংশ হয়ে আছে। একটি প্লাস্টিক ব্যাগের মধ্যে আধভাঙ্গা মুছনি রাবারটিকে নিয়ে তাবিজওয়ালার মতো ঘুরে বেড়াই। অথবা সে যেন আমার চলার পথনির্দেশক কম্পাস হয়ে ওঠে। যতক্ষণ ওটা আমার পকেটে থাকে, ততক্ষণ আমি জানি যে, কোনো এক দিন, কোনো এক স্থানে আমি আবার ‘ম'কে খুঁজে পাবো। খুঁজে যে পাবো-- সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। একজন বাকপটু নাবিক তাকে নিয়ে তুলেছে একটি বড়ো জাহাজে। তার কানে কানে বলছে মিষ্টি মধুর কথা। আর তাকে নিয়ে চলেছে বহু দূরে। এই পর্যন্ত। সে ছিল এমন একজন বালিকা-- যে সবাইকেই বিশ্বাস করে ফেলে। সে ছিল এমন ধরনের মেয়ে যে নতুন একটি মুছনি রাবার নিয়ে ভেঙ্গে দু টুকরো করে ফেলে। আধখানা কোনো অচেনা বালককে দিতে চায়।

বেশ কিছু টুকরা টাকরা সূত্র যোগাড় করে আমি চেষ্টা করেছিলাম তার সন্ধান জানতে। তার চেনাজানা সব জায়গায়ই ঢুঁ মেরেছি-- চেনা জানা সব মানুষের কাছেই গিয়েছি। কোনো সন্ধান পাইনি। পেয়েছি খুচরা খাচরা গোজামিল মার্কা তথ্য। এগুলো তুমি যতই যোগাড় করো না কেনো বুঝতে পারবে খুচরা খাচরা তথ্য খুচরা খাচরাই থাকে। কাজের কিছু হয় না। তার এই হাওয়া হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা যেন বিয়ের মতো কোনো ঘটনা। যেন সে চলে গেছে এই ভূমি ছেড়ে--চলে গেছে অসীম কোনো ভূখণ্ডে। যেমন সাগরের জলরাশির শেষ থাকে না। আমি এর পেছনে ছুটতে থাকি। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটে গেছি। গেছি মুম্বাই থেকে কেপ টাউন-- রিকিয়াভিক থেকে বাহামাতে। যেসব শহরের সঙ্গে পোতাশ্রয় আছে সেখানে তন্ন তন্ন করে তাকে খুঁজেছি। যখনই সে শহরে পৌঁছেছি, পৌঁছে যাওয়ার ঠিক আগেই সে শহর ছেড়ে চলে গেছে। সেখানেে শুধু আগোছালো বিছানায় তার উষ্ণ অবস্থানের কিছু বিমর্ষ চিহ্ন পাওয়া যায় মাত্র। চেয়ারের পিছনে ঝুলে আছে তার মোচড়ানো তোয়ালে। টেবিলের উপরে একটি আধপড়া বই। পৃষ্ঠা খোলা। বাথরুমে শুকানোর জন্য আধাশুকনা মোজা ঝুলে আছে। কিন্তু সেখানে সে নেই। পৃথিবীর যে-কোনো স্থান থেকে চতুর নাবিক আমার আসার ঘ্রাণ পেয়ে যায় । দ্রুত তাকে টেনে নিয়ে কেটে পড়ে। তাকে আবারো লুকিয়ে ফেলে। এর মধ্যে অবশ্যই আমি আর চৌদ্দ বছরে বয়সে আটকে নেই। আরো রোদে পুড়ে যেতে থাকি। আরো রুক্ষ হতে থাকি। মুখে ঘন দাড়ি হয়ে যায়। রূপক ও উপমার মধ্যেকার পার্থক্য জেনে গেছি। কিন্তু আমার একটি অংশ চৌদ্দ বছরেই পড়ে আছে। এবং আমার সেই অংশটি চিরকালের জন্য আরেকটি চৌদ্দর জন্যই অপেক্ষায় আছে। বেশ অবিচলভাবেই অপেক্ষায় আছে সেই দিনটির জন্য যখন পশ্চিমা হাওয়া এসে আমার পবিত্র লিঙ্গ ছুুুঁয়ে যাবে। ঠিক যেখানেই পশ্চিমা বাতাস বয় না কেনো সেখানে নিশ্চয়ই ‘ম’কে খুঁজে পাওয়া যাবে।

এই হলো আমার কাছে ‘ম'।

সে একটি মেয়ে-- যে কোনো একটি স্থানে থাকে না।

কিন্তু সে মেয়েটি নয় সে যে তার নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়।

এখানে কী বলতে চেষ্টা করছি তা ঠিক মতো জানি না। হয়তো সত্য নয়-- সত্যের চেয়ে আলাদা কোনো অনুভূতি নিয়েই লিখতে চেষ্টা করছি। অসত্য কোনো অনুভূতি নিয়ে লেখাটা হলো চাঁদের অন্ধকার পিঠে কাউকে নিয়ে ভ্রমণের মতো ঘটনা। এটা এতো আবছা যে তার কোনো চিহ্ন বোঝা যায় না। এবং এই অন্ধকার পথটি অনেক বড়। আমি যা বলতে চাইছি তা হলো, ‘ম' হলো সেই নারীটি যার প্রেমে পড়া উচিত আমার সেই চৌদ্দ বছর বয়সের মানুষের। কিন্তু তার প্রেমে পড়তে একটু দেরিই হয়েছে আমার। এবং তারপর, অত্যন্ত দুঃখজনক হলো সে আর চৌদ্দতে আটকে থাকেনি। আমাদের যখন প্রথম দেখা হয়েছিল, সেই দেখা হওয়ার কালটিতেই আমরা ভুল করেছিলাম। কারো সঙ্গে যে-নির্দিষ্ট সময়ে দেখা হওয়ার কথা, ঠিক সেই সময়টিকেই ভুলে যাওয়ার মতো ঘটনা এটা। তুমি যেন সেই দিন ও সময়টি পেয়েছিলে, কিন্তু দিনটি হিসেব করতে গোলমাল করে ফেলেছ।

যা-ই হোক না কেনো, সে ছিল চৌদ্দ বছরের মেয়ে-- এখনো সে সেই চৌদ্দতেই আছে। তার মধ্যে খণ্ডভাবে নয়, পূর্ণরূপেই সেই মেয়েটা আছে। যদি আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখি, সেই মেয়েটির
যাই হোক না কেনো তার মধ্যে একটি চোদ্দ বছরের মেয়ে এখনো বাস করছে। কোনো অংশ টংশ নয়-- পুরোপুরি মেয়েটি তার মধ্যে আছে। যতবার আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, এর মধ্যে ততবারই মেয়েটির একটি আভাসকে যেতে আসতে দেখেছি। আমাদের মিলনের সময়ে যখনি সে আমার বাহুতে মাথা রেখেছে, তার এই পুরনো বয়সটা মুহুর্তের মধ্যেই বদলে গেছে-- হয়ে গেছে সেই কিশোরী মেয়েটি। সে সময়ই তার নিজের ব্যক্তিগত টাইমজোনে ঘুরে বেড়ায়। এজন্যই আমি তাকে ভালো বেসেছিলাম। তাকে আমি কঠিনভাবে জড়িয়ে ধরতাম। এতো জোরে যে সে বলত, ব্যথা লাগছে। আমি তাকে আরো কঠিনভাবে জড়িয়ে ধরতে পারতাম সম্ভবত। কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনি। তাকে ছেড়ে দিতে চাইনি।

কিন্তু, ঠিক সেই সময়টি এসে গেল-- তাকে আবার হারিয়ে ফেললাম। মোটের উপর পৃথিবীর সব নাবিকদের নজর ছিল তার দিকে। তাকে রক্ষা করবার মতো ক্ষমতা আমার ছিল না। প্রতি মুহুর্তে কারো প্রতি দৃষ্টি রাখা সম্ভব নয় কোনো একজনের পক্ষে। তোমাকে ঘুমুতে হবে, বাথরুমে যেতে হবে। মাঝে মাঝে বাথটাব ঘষে ঘষে পরিস্কার করতে হবে। পেয়াঁজ কাটতে হবে, বরবটির গোড়া ছেটে দিতে হবে। গাড়ির চাকার হাওয়া পরীক্ষা করতে হবে। এভাবেই সবাই সবাইকে ছেড়ে দেই। অথবা সে এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এর পেছনে সব সময়ই একজন নাবিকের ছায়া রয়েছিল। একটি একক কালো, স্বশাসিত ছায়া বিল্ডিংএর দেয়াল বেয়ে মসৃণভাবে বারবার পড়ছিল। সেই ছায়ার কারণে এই বাথটাব, পিঁয়াজ এবং হাওয়া যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বোর্ড পিনের মতো রূপকল্পের টুকরা টাকরা হয়ে ছিল।

সে চলে গেলে, কেউ জানে না আমি কি ধরনের অমানুষিক যাতনায় ভুগেছিলাম, আমার সেই পতনটা কতো গভীর ছিল। এইসব হয় কিভাবে? আমি কেবল নিজে নিজেই সেইসব স্মরণ করতে পারি। আমি কী ভয়ানক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়েই না গিয়েছি। নির্ভুলভাবে দুঃখ-মাপার একটা যন্ত্র আবিষ্কার হোক এরকম একটি কামনা আছে আমার। সেই দুঃখগুলো যেন সংখ্যা আকারে সেই যন্ত্রে দেখা যায় যাতে তার রেকর্ড রাখতে পারা যায়। এবং মেশিনটি যদি হাতের তালুতে রাখার মতো হয় তবে তা হবে সবচেয়ে বড়ো কাজ। আমি যখন প্রতিবার গাড়ির চাকায় হাওয়া ভরি তখন এটা ভাবি।

শেষে সে মারাই গেল। মাঝরাতের ফোন কলটা সব স্পষ্ট করে দিল। আমি জানি না কোথায়, অথবা কিভাবে, বা ঠিক কী কারণে সে আত্মহত্যা করল। নিজেকে শেষ করে দিল। সম্ভবত সে এই বাস্তব জগত থেকে পরিপূর্ণভাবেই নিজেকে তুলে নিল। পৃথিবীর সব নাবিক আর তাদের মিষ্টি মিষ্টি কথা তাকে এখন বাঁচাতে পারেনি। এমনকি তারা মৃত্যুর দেশ থেকে তাকে ছিনিয়ে আনতে পারেনি। কিন্তু যদি তুমি সত্যি সত্যি মাঝরাতে কান পেতে শোনো, হয়তো তুমি শুনতে পারবে দূর থেকে ভেসে আসা নাবিকদের কান্নার বিলাপের ধ্বনি।

যখন সে মারা গেল তখন আমার নিজের চৌদ্দ বছরের বয়েসটাকেও হারিয়ে ফেললাম। একজন বেসবল খেলোয়াড় অবসরে যাওয়ার পরে স্থায়ীভাবে তার জার্সির নম্বর যেমন করে চলে যায়, ঠিক তেমনি করে আমার ভেতর থেকে চৌদ্দ বয়স বয়সটাও উঠে বেরিয়ে চলে গেল চিরকালের মতো। আমার চৌদ্দ বছর বয়সটা নিজে নিজে একটা বড় সিন্দুকের মধ্যে ঢুকে পড়ল। কঠিনভাবে সিন্দুকের তালা বন্ধ করে দিল। সিন্দুকটি সমুদ্রের তলায় কবরস্ত হলো। কোটি কোটি বছরের আগে এই সিন্দুকটি খোলা হবে না। সে পর্যন্ত ঝাঁঝালো এ্যামোনিয়া স্ক্রিস্টাল আর কাটাওয়ালা মাছ তার দিকে গুপ্তভাবে নজর রাখবে। স্নিগ্ধ পশ্চিমা বাতাস তখন বইছে না। এবং পৃথিবীর সব নাবিকরা তার মৃত্যুতে হাহাকার করছে। পৃথিবীর অবশিষ্ট নাবিকবিরোধীদের কথা নাইবা বললাম।

‘'ম’’ এর মৃত্যুর খবরটি পাওয়ার পর থেকেই কেন জানি নিজেকে গ্রহের দ্বিতীয় নিঃসঙ্গতম মানুষ বলে মনে হলো।

সবচেয়ে নিঃসঙ্গতম মানুষ সম্ভবত তার স্বামীই হবে। আমি তার জন্য এই পদটি বরাদ্দ করেছি। সে কেমন মানুষ তার কোনো ধারণাই নেই আমার। তার বয়স কত আমি জানি না। সে কী করে আর কী করে না সে বিষয়েও কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। শুধু জানি তার একটি প্রগাঢ় কণ্ঠস্বর আছে। কিন্তু একটি বিষয় আমাকে বলেনি তা হলো সে কি কোনো নাবিক? অথবা নাবিকদের বিরোধী কেউ? যদি সে শেষেরটি হয়ে থাকে তবে সে আমার দেশি ভাইদের একজন। এমন কি যদি সে তার প্রাক্তন স্বামীও হয়ে থাকে--তবে এখনো তার প্রতি আমার আবেগ আছে। তার যন্ত্রণা কমানোর জন্য কিছু করার ইচ্ছে আমার আছে।

কিন্তু আমার প্রাক্তন মেয়ে-বান্ধবীর স্বামীকে খুঁজে বের করার কোনো উপায় জানা নেই। আমি তার নাম জানি না, অথবা সে কোথায় থাকে তাও আমার অজানা। সম্ভবত সে এর মধ্যে তার নাম-ঠিকানা ভুলে গেছে। সর্বোপরি সে হলো পৃথিবীর নিঃসঙ্গতম লোক। যে পার্কে হাটতে যাই সেখানে ইউনিকোর্ণ মূর্তি আছে। তার সামনে বসে পড়ি। ঝর্ণার ঠাণ্ডা জলের কাছে বসে আমি ভাবি। ভাবি সেই লোকটির কথা। 'পৃথিবীর নিঃসঙ্গতম মানুষ' অর্থ কী হতে পারে সেটা নিয়ে কল্পনা করি। আমি এর মধ্যে জেনে গেছি পৃথিবীর দ্বিতীয় নিঃসঙ্গতম মানুষটির পরিস্থিতি। কিন্তু এখনো জানি না সবচেয়ে নিঃসঙ্গতম মানুষটির পরিস্থিতি। পৃথিবীর প্রথম ও দ্বিতীয় নিঃসঙ্গতম মানুষকে একটি গভীর উপসাগর যেন বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যথাসম্ভব গভীর এবং চওড়াও বটে। এই উপসাগরের মাঝখানটি পাখিদের মৃতদেহ জমে উঁচু হয়ে গেছে। এই পাখিগুলো চেষ্টা করেছিল উপসাগরটি পার হতে। পারেনি। ব্যর্থ হয়েছে।

একদিন অকস্মাৎ তুমি নারীবিহীন পুরুষ হয়ে গেলে। দিনটি এসে গেল-- তুমি জানতে পারলে না। কোনো ধরনের ম্লান সতর্ক সংকেত বা আগাম ধারণা পাওয়া ছাড়াই এটা ঘটে গেল। আগে থেকে কিছুই টের পাওয়া গেল না। খারাপ কিছু ঘটার কোনো লক্ষণও বোঝা গেল না। কোনো করাঘাত শোনা গেল না। কারো গলা খাকরিও হলো না। একটি কোণের দিকে ফিরেছ কি টের পেলে তুমি এর মধ্যে সেখানে চলে গেছ। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পথ নেই। একবার যদি মোড় ঘোরো তবে যেখানে যাবে সেটা হলো একমাত্র সেই পৃথিবী যেখানে সম্ভবত তুমি বাস করতে পারো। সেই পৃথিবীতে তোমাকে অভিহিত করা হবে সেই পুরুষ মানুষগুলো হিসেবে যাদের কোনো নারী নেই। সব সময়েই নিরবিচ্ছিন্নভাবে হীমশীতল বহুবচনে বলা হবে।

শুধু নারীবিহীন পুরুষ ব্যাপারটি খুবই বেদনাদায়ক। খুবই হৃদয় বিদারক। এদুটো একই মনে হয়। তুমি সেই মনোরম পশ্চিমা হাওয়া হারাচ্ছ। তোমার কাছ থেকে চৌদ্দ সংখ্যাটি মুছে গেছে। (কোটি কোটি বছরকে চিরতরে বোঝায়।) বহুদূরের সেই বেদনাবিদ্ধ উদ্বিগ্ন নাবিকরা । ঝিনুক আর কোলাকান্ত মাছের ফসিলসহ সাগরের তলদেশ। রাত একটার পরে কোনো বাড়ি থেকে আহবান। রাত একটার পরে একজন আগন্তুকের কাছ থেকে পাওয়া আহবান। জানা-অজানার মধ্যে কোথাও কেউ আছে, তা তুমি জানো না। তার জন্য অপেক্ষা করা। যখন তুমি তোমার গাড়ির চাকার হাওয়া পরীক্ষা করছ তখন তোমার চোখ থেকে ঝরে পড়ছে পথের উপর। ৷

আমি যখন পৌরানিক এক শিংওয়ালা ঘোড়ার মূর্তির সামনে বসেছিলাম তখন আমি তার স্বামী লোকটির জন্য প্রার্থনা করেছিলাম যাতে সে শোক কাটিয়ে উঠতে পারে। আমি আরো প্রার্থনা করেছিলাম যেন সে অপ্রয়োজনীয় ও তুচ্ছ সব বিষয় ভুলে যায়। কিন্তু সত্যি সত্যি তার সত্তাকে যেন কখনোই ভুলে না যায়। এই সত্তাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করেছিলাম-- সে যেন সত্যিটাকে ভুলে যেতে পারে। এই সত্যিটা হলো তাই যা ইতিমধ্যেই সে ভুলে গেছে। আমি সত্যিকারে এভাবেই অনুভব করি। কল্পনা করি। চিন্তা করি --সে হলো পৃথিবীর নিঃসঙ্গতম দ্বিতীয় লোক। প্রথম নিঃসঙ্গতম লোকের জন্য রয়েছে তার সহানুভূতি আর প্রার্থনা। (এই নিঃসঙ্গতম লোকটির সঙ্গে কখনো দেখাই হয়নি তার।)


কিন্তু সে কেনো আমাকে ফোন করার মতো ঝামেলায় গেল। এজন্য আমি তাকে মন্দ বলছি না। আমার কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না, এই সময়েও, তাই কিছু কথা বলছি। সে কিভাবে আমার সম্পর্কে জানলো? উত্তর সম্ভবত খুব সোজা। ‘'ম’’ অবশ্যই তার স্বামীকে আমার সম্পর্কে বলে গেছে। আমার সম্পর্কে কিছু একটা বলে গেছে। এই কারণেই সে আমাকে ফোন করেছে-- একমাত্র এই ধারণাটিই আমি কল্পনা করতে পারি। যদিও সে কী বলেছিল সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। কী মূল্য আছে সে কথার। তার কাছে আমার কী মূল্য ছিল, কী অর্থ হয়ে ছিলাম আমি তার জীবনে যে, সে তার স্বামীকে তার প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে বলে যেতে হলো? তার মৃত্যুর সঙ্গে কি ভয়ঙ্কর কিছু আছে? তার এই চলে যাওয়ার বিষয়টাতে কি কিছু ছায়া দিয়ে ঢেকে দিতে পারি? হতে পারে ‘'ম’কে তার স্বামী বলে গেছে আমার পুরুষাঙ্গটি কত সুন্দর! যখন দুপুর পড়ে এলে আমরা দুজনে যখন বিছানায় শুয়ে থাকতাম, তখন সে হাত দিয়ে এটি ধরে থাকত। আর ভাবত যে এটা ভারতের বিখ্যাত কোনো রাজমুকুটের হীরে হবে। সে বলত, ‘এটা খুবই সুন্দর।’ এটা সত্যি হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। এ বিষয়ে কোনো ক্লু আমার কাছে নেই।

এটাই কি সেই ব্যাপারটি যা আমার কাছে ফোন করতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল? রাত একটার সময়ে সে আমার লিঙ্গের উপর শ্রদ্ধা রাখতে গিয়েই কি ফোন করেছিল? এটা সোজা নয়। এটা অবান্তর। যাই হোক, তাকিয়ে দেখো--আমার লিঙ্গটা কিন্তু ততটা আকর্ষণীয় নয়। খুব বেশি হলে গড়পড়তায় মাঝারী মানের সুন্দর বলতে পারো। তার সৌন্দর্যবোধ মাঝে মাঝে আমার মাথা ঝাঁকিয়ে দেয়। তার খাপছাড়া বোধবিবেচনা ছিল। অন্যদের মতো নয়।

ধরে নিচ্ছি, জুনিয়র হাই স্কুলে থাকতে আধখানা পেন্সিলের ইরেজার আমাকে ভাগ দিয়েছিল, সম্ভবত সেই ঘটনাটিই সে বলেছিল তার স্বামীকে। ভবিষ্যতের জন্য কোনো পরিকল্পনা হিসেবে এটা বলেনি । আর সেটাই সে ভালো করে বুঝিয়েছিল। এটা ছিল অতীতের বিষয়। এই অতীত থেকে খুদে একটা স্মৃতি বেছে নিয়ে তার স্বামীকে হয়তো বলেছিল। এবং এটাই তার স্বামীকে ঈর্ষান্বিত করেছিল। সত্যি হলো ‘'ম’’ আমাকে মুছনি রাবারের অর্ধেকটা দিয়েছিল, সেই ঘটনাটি তাকে খুব বেশি ঈর্ষান্বিত করেছিল । দুই বাসভর্তি নাবিকের সঙ্গে সঙ্গম করলে তার যে অপরাধ হতো তা কিন্তু মুছনি রাবার খণ্ডটি দেওয়ার অপরাধের চেয়ে কম বলে তার মনে হয়েছিল। ‘দুই বাসভর্তি শক্তিশালী নাবিক’’এর অর্থ কী? ‘'ম’’ এবং আমি, আসলে, দুজনেই ছিলাম চৌদ্দ বছর বয়সের। আর এটা আমাকে দিয়েছিল একটি লিঙ্গোত্থান। এসব কিছুই হয়েছিল পশ্চিমা হাওয়ার কারণে। একটি কিশোরী তার নতুন মুছনি রাবার ভেঙে দু টুকরো করল। আর তার একটি আমাকে দিয়ে দিল-- এটা একটা অসাধারণ ঘটনা। এটা যেন টর্নেডো ঝড়ের কাছে ডজন খানেক গোলাঘর ছেড়ে দেওয়ার মতো ব্যাপার।

এরপরে যতবার আমি ঘোড়ার মূর্তির পাশ দিয়ে গিয়েছি, ততবার কিছুক্ষণ সেখানে বসেছি। বসে বসে নারীবিহীন পুরুষদের কথা ভেবেছি। কিন্তু এই জায়গায় কেনো? কেনো একটি ঘোড়ার মূর্তির কাছে? হয়তো, ঘোড়ার মূর্তিটিও একটি নারীবিহীন পুরুষ মাত্র। এর মানে হলো, কখনোই আমি কোন ঘোড়া দম্পতিকে দেখিনি। সে-- মানে সেটা মদ্দা ঘোড়াই হবে, সব সময়ই একা। তার ধারালো শিং আকাশের দিকে উঁচু হয়ে আছে। যেভাবে আমরা আমাদের ঘাড়ে নিঃসঙ্গতাকে বোঝার মতো বয়ে নিয়ে চলছি, হয়তো আমরা ঘোড়ার মূর্তিটিকে সেভাবে নারীবিহীন পুরুষের প্রতীক হিসেবে দত্তক নিতে পারি। সম্ভবত আমাদের জামার বুকপকেটে, টুপিতে ঘোড়ার মূর্তি আঁকা ব্যাজ সেলাই করে নেওয়া উচিত। তারপর উচিত সেগুলো পরে সারা পৃথিবীর পথে পথে শোভাযাত্রা করা। সেখানে কোনো সঙ্গীত হবে না। কোনো পতাকা হবে না। প্রচারপত্র থাকবে না। (এক্ষেত্রে আমি 'সম্ভবতঃ' শব্দটি ব্যবহার করছি। একটু বেশিই ব্যবহার করছি। সম্ভবত।)

নারীবিহীন পুরুষ হওয়া খুব সহজ। তুমি একটি মেয়েকে গভীরভাবে ভালোবাসো। এরপর সে কোথাও চলে গেল। এটাই যথেষ্ঠ। অধিকাংশ সময়, (আমি নিশ্চিত যে, তুমি সবকিছুই ভালো করে জানো), তাদেরকে ধূর্ত নাবিকরা নিয়ে চলে যায়। যেতে যেতে তারা নারীদের সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে পটায়। তাদেরকে নিয়ে চলে যায় মারসেইলেস অথবা আইভোরি কোস্টে। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। অথবা এই নাবিকদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারে না নারীরা। তাদের নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে হয় তাদের। এ ব্যাপারে আমরা খুব বেশি কিছু করতে পারি না। এমনকি নাবিকরাও কিছু করতে পারে না।

যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেনো এভাবে তুমি নারীবিহীন পুরুষে পরিণত হবে। কখন যে হচ্ছ তাও তুমি আগে জানতে পারছ না। যখন তুমি একবার নারীবিহীন পুরুষে পরিণত হয়ে যাবে তারপর নিঃসঙ্গতা তোমার শরীরের মধ্যে একটু একটু করে গভীরভাবে ঢুকে পড়বে, যেভাবে লাল মদের দাগ প্যাস্টেল কার্পেটে ঢুকে পড়ে। তুমি যতোই রঙ মোছার বই পড়ো না কেনো, দাগ মুছে ফেলাটা অতো সহজ কম্মো নয়। কিছু সময়ের জন্য দাগ সামান্য বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে বটে, কিন্তু তোমার শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ার আগে পর্যন্ত সে দাগ থেকে যাবে। দাগ হওয়ার অধিকার আছে। কখনো কখনো জনসমক্ষে আদালতের রায় ঘোষণার মতো এই দাগ তৈরি করার অধিকার আছে। এবং তুমি এভাবে বাকি জীবনের জন্য এই দাগ নিয়ে বেঁচে থাকবে। দ্ব্যার্থবোধক রূপরেখাসহ এই দাগের রং ধীরে ধীরে আরো ছড়িয়ে পড়বে।

পৃথিবীতে শব্দ এক রকম নয়। ঠিক এ রকমভাবে তুমি নানা তৃষ্ণার অভিজ্ঞতা পাও। এবং এভাবেই তুমি বেড়ে ওঠো। এভাবেই তোমার মুখে দাড়ি গজায়। এভাবেই স্টারবাকসের বারিস্টারা কফি বানিয়ে দেওয়ার জন্য তোমার সঙ্গে বাতচিত করে। মার্কিনী জাজ সঙ্গীত শিল্পী ক্লিফোর্ড ব্রাউনের সুরও আলাদা। মাটির নিচের গাড়ির দরজাগুলো বন্ধ হয় নতুন ও অপ্রত্যাশিতভাবে। ওমতো সান্দো থেকে আয়োমা ইচোমে পর্যন্ত তুমি যদি হাঁটো তবে আবিষ্কার করতে পারবে, প্রথম দিন যতটা দুরত্ব মনে হয়েছিল, তা আর এক রকম থাকছে না। কোনো একজন নতুন নারীর সঙ্গে তোমার দেখা হলো। সে যতই সুন্দরী হোক না কেনো, (আসলে, সে যতই সুন্দরী হবে, ততোই এটা সত্যি হয়ে উঠবে)-- তার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর থেকেই তুমি তাকে হারানোর দুশ্চিন্তায় পড়বে। গ্রীক, এস্তোনিয়া বা তাগালোক-- যে ভাষা জিহবা থেকে বের হোক না কেনো, নাবিকদের ইঙ্গিতপূর্ণ ছায়া -- তা তোমাকে উদ্বিঘ্ন করে তুলবে। পৃথিবীর বিচিত্র সব বন্দরের নাম তোমার স্নায়ূকে বিকল করে দেবে। কারণ এর মধ্যে নারীবিহীন পুরুষ অর্থ কী। তুমি একটি প্যাস্টেল রঙের ফরাসী কার্পেট, আর নিঃসঙ্গতা হলো ফরাসী দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের বর্দো নামের মদের দাগ। এই দাগ মোছা যাবে না। ফরাসী দেশ থেকে এই নিঃসঙ্গতা আনা হয়েছে। ক্ষতের বেদনা আনা হয়েছে মধ্য প্রাচ্য থেকে। নারীবিহীন পুরুষদের জন্য এই পৃথিবী হলো বিশাল আর বিদ্রুপের মিশেল। এটা চাঁদের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

‘'ম’ আর আমার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়েছে দুবছর। এটা খুব দীর্ঘ সময় নয়। তুমি বলতে পারো--মাত্র দু বছর. অথবা, দীর্ঘ একটি দু বছর। তোমার দৃষ্টিভঙ্গির উপর এটা নির্ভর করে। আমি বলেছি, আমরা ‘দুবছর’ চলে গেছি। কিন্তু বস্তুতপক্ষে, মাসে আমাদের মাত্র দু কি তিনবার দেখা হতো। এজন্য তার নিজের কিছু কারণ ছিল। কিছু কারণ আমার দিক থেকেও ছিল। এদিক থেকে দুর্ভাগ্যবশত আমরা আর চৌদ্দ বছর বয়সে আটকে নেই। এবং এই কারণগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের ছাড়াছাড়ির কারণ। সে যাতে ছেড়ে না যেতে পারে সেজন্য কতোভাবেই হোক না তাকে শক্তভাবে ধরে রেখেছিলাম। নাবিকদের গাঢ় কালো ছায়াগুলো একটানা চলে যাচ্ছিল। সে ছায়াগুলি চলে যাচ্ছিল ধারালো বোর্ডপিনের মতো চারিদিকে ক্ষত সৃষ্টি করে।

‘'ম’এর কথা ভাবলেই সবার আগে মনে পড়ে সে ব্যান্ড সঙ্গীত পছন্দ করত। এদের মধ্যে পারসি ফেইথ, মন্টোভানি, রেমন্ড লেফাভরে, ফ্রাংক চাকফিল্ড, ফ্রান্সিস লেই, ১০১ স্ট্রিস, পল মারিয়াত, বিলি বাওঘানের গান। আমার মতে অক্ষতিকর গানের প্রতি তার একধরনের দৈবী স্নেহ ছিল। দি এঞ্জেলুক স্ট্রিংএর বনের হাও ঘ্রাণের বিস্তার, বোবা ব্রাস, আর যে বাদ্যযন্ত্রটি তোমার হৃদয়ে আঘাত করছে--এই গানগুলি। এই মনোরম গানের সুর কখনোই ফুরোয় না। এর ঐকতান যেন মুখের মধ্যে চকোলেট-গলার মতো মধুর, যেন রেকর্ড করার সময় উদ্ভুত প্রতিধ্বনি চোখে জল আনে।

গাড়ি চালানোর সময়ে সাধারণত আমি রক বা ব্লুজ শুনি। ডেরেক ও দি ডোমিনোস, ওটিস রেডিং এবং দি ডোরস। কিন্তু ‘'ম’ এগুলোর কোনোটিই বাজাতে দিত না। সে সব সময়ই ডজনখানেক বা তারচে বেশি ব্যান্ডগানের ক্যাসেট ভর্তি একটা ব্যাগ নিয়ে চলত। এই ক্যাসেটগুলো একের পর বাজাতো। আমরা উদ্দেশ্যহীনভাবে গাড়ি চালাতাম। সে সময়ে ফ্রান্সিস লাইয়ের গাওয়া-- 13 hours en France গানটির সঙ্গে গুণগুণ করত। তার সুন্দর ঠোঁটদুটির উপর হালকা করে লিপিস্টিক বোলানো। যাই হোক কেনো, তার দশ হাজারের মতো গানের টেপ অবশ্যই থাকতে হবে। সে জানতো পৃথিবীর সব পবিত্র গানবাজনার বিষয়ে সবকিছুই জানতে হবে। যদি ব্যান্ড সঙ্গীতের কোনো জাদুঘর থাকে, তবে সে তার প্রধান কিউরেটর হবে।

যখন আমরা যৌন মিলন করতাম তখনও একই ঘটনা ঘটত। বিছানায় সব সময়ই গান বাজাতো। আমাদের মিলনের সময়ে কতবার যে পারসি ফেইথের এ সামার প্লেস গানটি শুনেছি তা গুণে বলতে পারব না। একটু অস্বস্তিকর হলেও সত্যি যে যখনই ঐ গানটি শুনি তখনই আমার বেশ উত্তেজনা জাগে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে। মুখ লাল হয়ে যায়। এ পৃথিবীকে তুমি ঘষে মেজে দেখতে পারো। আমি বাজি ধরতে পারি, দেখবে সেখানে ‘এ সামার প্লেস’ গানটি শুনে কামোত্তেজ্জিত একটি মাত্র মানুষ দেখতে পাবে। আর সে মানুষটি হলো-- এই আমি। না, শুধু একা আমি নই-- হয়তো তার স্বামীও। এই সম্ভাবনাটি জারি রাখা যাক। এ পৃথিবীকে ঘষে মেজে দেখতে পারো। আমাকেসহ তুমি সম্ভবত দুটি মানুষকে খুঁজে পাবে। এই দুটি মানুষই ‘'এ সামার প্লেস’ গানটি শুনে শুনে উত্তেজিত হয়। আর হয় বিরক্তও। আবার পুনরাবৃত্তি করা যাক এইভাবে। এটা কাজে লাগবে।

শূন্যস্থান।

‘'এই ধরনের গান ভালোবাসার কারণ হলো,’’ ‘'ম’ একবার বলেছিল, ‘'শূন্যের প্রশ্নে।’’

‘'শূন্যস্থান?’’

‘'যখন এই গান আমি শুনি,তখন আমার মনে হয়--আমি বিশাল খোলা-- শূন্যস্থানে আছি। এটা এমন একটা বিশাল স্থান যা কোনো কিছু দিয়েই বন্ধ করা যায় না। কোনো দেওয়াল নেই। ছাদ নেই। কিছু চিন্তা করার দরকার নেই আমার। কিছু বলার দরকার নেই। আর নেই কিছু করারও। সেখানে আছি-- শুধু এটাই অনেক। আমার চোখ বন্ধ রাখি। আর নিজেকে বেঁধে রাখি সুন্দর বাঁধনে। কোনো মাথা ব্যথা নেই, শীতবোধও নেই। নেই কোনো মাসিক চক্র। নেই গর্ভধানও। সব কিছুই সহজ সুন্দর, শান্ত আর প্রবাহমান। সেখানে আমি থাকতে পারি।”

“যেন তুমি স্বর্গে আছ?”

“ঠিক ধরেছ।” ‘'ম’ বলেছিল, ‘স্বর্গে আবহ সঙ্গীত হিসেবে ‘পেরসি ফেইথ’ বাজে-- আমি নিশ্চিত। তুমি কি আমার পিঠ আরেকটু ডলে দেবে?”

“নিশ্চয়ই”, আমি উত্তর দিয়েছিলাম।

“ তুমি সত্যিই খুব ভালো পিঠ ডলতে পারো।”

হেনরি ম্যানকিনি আর আমি একটা চোরা চাউনি দিয়েছিলাম। একটা মরা হাসি আমাদের ঠোঁটে খেলে গিয়েছিল।

অনেক জিনিসই আমার হারিয়ে গেছে। তার মধ্যে ব্যান্ড সঙ্গীতও সেই হারানো তালিকায়। গাড়ি চালাতে যাই তখন এই চিন্তাটা আমাকে ঘাই মারে। পরিবর্তন করতে যে আলো দরকার তার জন্য আমি যখন অপেক্ষা করি, আমি কিছুটা আশা করি যে, যে-মেয়েটির দিকে আগে কখনো চোখ রাখিনি, সেই মেয়েটি হুট করে ঝাঁকি মেরে যাত্রীদের দরোজাটা খুলে ফেলবে, সুড়ুৎ করে ভেতরে ঢুকে পড়বে, কোনো কথা না বলে-- কোনোদিকে না তাকিয়ে রেডিওর মধ্যে একটি ক্যাসেট ঢোকাবে। এই ক্যাসেটে ‘'এ সামার প্লেস’’ গানটি আছে। আমি এখনো এই স্বপ্ন দেখি। বলা ভালো, অবশ্যই এটা অবশ্য কখনোই ঘটে না। মানে, আমার গাড়িতে কোনো ডেক ক্যাসেট প্লেয়ার আর নেই। এখন যখনি আমি গাড়ি চালাই, একটি ইউএসবি কেবল ব্যবহার করে একটি আইপড চালাই। এবং ফ্রান্সিস লাই ও ১০১ 6স্ট্রিংস গানদুটি অবশ্যই আমার আইপডে নেই। গরিলাস আর ব্লাক আইড পিয়ারস আছে পছন্দের তালিকায়।

একজন নারী হারালে এরকমই হয়। এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একজন নারী হারানো মানে সকল নারীকেই হারানো মনে হয়। এইভাবেই আমরা নারীবিহীন পুরুষ হয়ে যাই। আমরা হারাই পেরসে ফেইথ, ফ্রান্সিস লাই ও, ১০১ স্ট্রিংস। হারাই মোনাইটস, কোয়েলকান্থস। এবং তার সুন্দর পিঠকেও হারিয়ে ফেলি। হেনরি মানকিনির মুন রিভার গানের তিনটি ছাঁদের তালে তালে আমি আনার হাতের তালু দিয়ে ‘'ম’ এর পিঠ নিয়মিত ডলে দিতাম।…. কিন্তু এখন এর সবই উবে গেছে। এর সবই এক টুকরো ভাঙা পুরনো মুছনি রাবারের মধ্যে রয়ে গেছে। আছে দূরে মিলিয়ে যাওয়া নাবিকদের সমাধীকালীন গানের মধ্যে। আর আছে ঝর্ণার পাশে দাঁড়ানো এক শিংওয়ালা হরিণের কাছে। সেই হরিণের নিঃসঙ্গ শিংটি আকাশের দিকে তাক করা।

আমার আশা হয়, ‘'ম’ এখন স্বর্গে অথবা স্বর্গের মতো জায়গায় আছে। সেখানে সে 'এ সামার প্লেস' গানটি শুনছে। খোলা সীমাহীন মূর্ছনায় এই গানটি খুব শান্তভাবে জড়ানো আছে। আমি ঠিক আশা করছি জেফারসন এয়ারপোর্ট বাজছে না। (আমি নিশ্চিত-- ঈশ্বর অতোটা নিষ্ঠুর নয়)। এবং এটা খুবই সুন্দর হবে যদি সে পিজ্জিকাটীর বেহালায় এ সামার প্লেস শোনে। তার ভাবনা আমার দিকে মাঝে মাঝে আসে। তবে এটা বেশি আশা করা হবে। আমি প্রার্থনা করি যে, আমি যদি এর অংশ নই, ‘'ম’ সুখী হয়েছে এবং পরমার্থিক জগতে এই গানের মধ্যে দিয়ে শান্তিতে আছে।

নারীবিহীন পুরুষদের অন্যতম হিসেবে আমি সর্বান্তকরণে আমি এই প্রার্থনা করছি। এক্ষেত্রে একমাত্র প্রার্থনাই আমি করতে পারি।
সম্ভবত।

Post a Comment

0 Comments